মিসরের প্রখ্যাত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহারে ভর্তি হওয়ায় শিক্ষার্থীর বাবা ও ভাইকে গুম করেছে চীনা প্রশাসন। এমন অভিযোগ এনে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ইরশাদ আব্দুল আহাদ নামের এক চীনা নাগরিক।
আব্দুল আহাদ জিংজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম আবদুল আহাদ জুময়া (৭০) ও ভাই আবদুল আহাদ আবু বকর।
গত ৭ জানুয়ারি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে এমন দাবি করে একটি ভিডিও আপলোড করেন ইরশাদ আব্দুল আহাদ।
ভিডিওতে প্রায় ৩ বছর আগে গ্রেফতার হওয়া বাবা ও ভাইয়ের ছবি দেখিয়ে ইরশাদ আব্দুল আহাদ দাবি করেন, মিসরের আল-আজহারে পড়তে যাওয়ার অপরাধে ২০১৭ সালে তার বাবা ও ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় চীন সরকার। গ্রেফতারের পর থেকে তাদের কোনো সন্ধান নেই। চীনা কর্তৃপক্ষ তার বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছে।
পরে ওই ভিডিও প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ‘২০১৫ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার উদ্দেশে মিসরে যান ইরশাদ। এর আগে বন্ধুদের সঙ্গে তুরস্কে যান তিনি। সেখান থেকেই মিসরে পাড়ি জমান। বিষয়টি চীনের উইঘুর প্রশাসনের কানে গেলে ২০১৭ সালে ইরশাদের বাবা ও ভাইকে চীনের সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কিন্তু এর পর থেকে জিংজিয়াংয়ের কোথাও তাদের দেখা যায়নি। গ্রেফতারের পর এই দুই চীনা মুসলিম নাগরিককে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়েও মুখ খুলেনি উইঘুর প্রশাসন।
এদিকে গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না ইরশাদ। মিসর আল-আজহারের এ শিক্ষার্থী বর্তমানে তুরস্কে প্রবাস জীবনযাপন করছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
টুইটারে দেয়া ভিডিওবার্তায় ইরশাদ আব্দুল আহাদ জানান, ‘আসসালামু আলাইকুম! আমি চীনের পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে আপনাদের একজন উইঘুর মুসলিম ভাই ইরশাদ আবদুল আহাদ।
আমি ২০১৫ সালে আল আজহারে ইসলামি বিজ্ঞান ও আরবি সাহিত্য অধ্যায়নের জন্য মিসরে গমন করি এবং সেখানে দেড় বছর পড়াশোনার পর জানতে পারি, আমার আল আজহারে পড়াশোনা করতে আসার অপরাধে চীন সরকার আমার বাবা আবদুল আহাদ জুময়া (৭০) ও ভাই আবদুল আহাদ আবু বকরকে গ্রেফতার করেছে।
নিরাপত্তার অভাবে আমি মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারছি না। তাই এখন তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছি।
এদিকে নিখোঁজ বাবা ও ভাইয়ের খবর জানতে উইঘুরে আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তারা সব সময়ই একই কথা জানাচ্ছেন যে, আমার বাবা ও ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের দুজনকেই চীনা কর্তৃপক্ষ খুন করেছে বলে ধারণা করছি।
আর আপনাদের সবার সহায়তা পাওয়ার জন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে আমি এই ভিডিও প্রকাশ করেছি। আপনারা আমার এ ভিডিওটি শেয়ার করুন যেন, বিশ্বব্যাপী আমার এ বার্তা পৌঁছে যায়। সবাই যেন এ বিষয়টি অবগত হয় যে, জিংজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা কমিউনিস্টরা কী অবর্ণনীয় জুলুম ও অত্যাচার চালাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের নির্যাতন চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিনিয়তই সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদের যুগের পর যুগ অবরোধ করে রেখেছেন।