Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ শুক্রবার, মে ২০২৫ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

৯ মাসে চলে যান বাবা তিন বছরে মা; স্বপ্নার দায়িত্ব ওসির কাঁধে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:১৭ PM
আপডেট: ১৪ জানুয়ারী ২০২০, ০৭:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


স্বপ্নার বয়স যখন নয় মাস তখন তার মাকে ফেলে অন্যত্র চলে যান বাবা আমির হোসেন। এরপর থেকে স্ত্রী আসমা বেগম ও সন্তান স্বপ্নার কোনো খোঁজখবর নেননি আমির।

স্বপ্নার বয়স যখন তিন বছর তখন স্বপ্নাকে দাদির কাছে রেখে মা আসমাও অন্যত্র চলে যান। সন্তানের কথা চিন্তা করেননি বাবা-মা। সন্তানের জীবন অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে নিজেদের সুখের ঠিকানায় পাড়ি জমান স্বপ্নার বাবা-মা।

এ অবস্থায় বাবা-মা হারা নাতিকে নিয়ে বিপাকে পড়েন দাদি নূরজাহান বেগম (৬৮)। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে এবং রাস্তা থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে স্বপ্নাকে লালন-পালন করেন তিনি। এরই মধ্যে স্বপ্নাকে স্কুলে ভর্তি করেন দাদি। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া অবস্থায় অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় স্বপ্নার। এবার স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার (১২ জানুয়ারি) নাতনি স্বপ্নাকে নিয়ে লাকড়ি কুড়াতে আড়াইহাজার থানার মাঠে যান দাদি নূরজাহান। সেখানে দাদি-নাতনিকে লাকড়ি সংগ্রহ করতে দেখেন ওসি নজরুল। এ সময় নূরজাহানের কাছ থেকে স্বপ্নার জীবন কাহিনি শোনেন ওসি। পরে স্বপ্নার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার কল্যানন্দী এলাকার আমির হোসেন স্ত্রী-সন্তানকে রেখে অন্যত্র চলে যান। এরপর স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেননি তিনি। তিন বছরের স্বপ্নাকে ফেলে মা আসমাও চলে যান। দাদি ছাড়া কেউ রইল না স্বপ্নার। অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে দাদি নূরজাহানকে অনেক কষ্ট করতে হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে নাতনিকে নিয়ে সংসার চালান তিনি। পাঁচ বছর বয়সে স্বপ্নাকে স্কুলে ভর্তি করেন। গত তিন বছরে কল্যানন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছিল নাতনি। কিন্তু অভাবের সংসারে অর্থাভাবে স্বপ্নার লেখাপড়া বন্ধ করে দেন দাদি। সেই সঙ্গে নাতনিকে নিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করতে যান নূরজাহান।

রোববার লাকড়ি সংগ্রহ করতে আড়াইহাজার থানার মাঠে গেলে বিষয়টি নজরে আসে ওসি নজরুল ইসলামের। পরে দাদির মুখে শোনেন নাতনির এমন করুণ কাহিনি। এমন কাহিনি শুনে নিজেকে সামলাতে পারলেন না ওসি। সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নার যত খরচ লাগে তা বহনের দায়িত্ব নেন তিনি। সেই সঙ্গে স্বপ্নাকে কোলে তুলে নেন ওসি।

আড়াইহাজার থানা পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, আমার চোখের সামনে অর্থের অভাবে এক কন্যার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। স্বপ্নাকে মানুষের মতো হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। অর্থের অভাবে কিছুতেই স্বপ্নার জীবন ঝরে যেতে পারে না। স্বপ্নার লেখাপড়ার সব খরচ আমি নিজে বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া শিশুটির দায়িত্বও নিয়েছি আমি।

তিনি আরও বলেন, অর্থের অভাবে স্বপ্নার মতো কোনো শিশুর স্বপ্ন যেন ঝরে না যায় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আসুন আমরা সবাই স্বপ্নার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই, স্বপ্নাদের দায়িত্ব নিই।

Bootstrap Image Preview