Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ সোমবার, জুন ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

চার যুবকের স্নেহ ও ভালোবাসায় বড় হচ্ছে মেছো বাঘের ০৬ টি বাচ্চা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০২০, ১০:৩৯ AM
আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০২০, ০১:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


মা হারা সদ্য ভূমিষ্ঠ ৬ টি মেছো বিড়ালের বাচ্চা বড় হচ্ছে প্রাণ প্রকৃতি প্রেমী চার যুবকের মমতা ও ভালোবাসায়। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উপজেলার সবুজবাগ এলাকায় সোহেল শ্যাম এর বাসায় মেছো বাঘের বাচ্চাগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ইতোমধ্যে অনেকটাই সুস্থ সবল করে তুলেছেন চার যুবক।

তারা হলেন সোহেল শ্যাম,খোকন থৌনাজাম, হৃদয় দেবনাথ এবং বিশ্বজিৎ ভট্রাচার্য্য বাপন। সোর্সের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ নভেম্বর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম থেকে বন বিভাগের লোকজনের সহায়তা নিয়ে এই মেছো বাঘের বাচ্চাগুলো উদ্ধার করেন এই চার যুবক।

উদ্ধারের সময় এদের আনুমানিক বয়স ছিল ২০ দিন। এ বয়সটা অন্যান্য প্রাণীদের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও মেছো বাঘের বাচ্চাদের বেলায় শুধু চোখ ফুটতেই আরও বেশ কিছু দিনের প্রয়োজন হয়।মেছো বাঘের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগতভাবেই এদের জন্মের পর স্বাবলম্বী হতে ৪/৫ মাস সময় লাগে।

সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছোট ছোট ৬টি মেছো বাঘকে উদ্ধার করে এই চার জন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি প্রেমীদের তত্ত্বাবধানে বড় করে তোলার জন্য দায়িত্ব দেন মৌলভীবাজার বন বিভাগ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সোহেল শ্যামের বাসায় এই চার যুবক পরম মাতৃস্নেহে এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং বড় করে তুলতে দিন রাত সেবা করে যাচ্ছেন। উদ্ধার হওয়ার পর ক্যাট মিল্ক খাওয়ানো হতো তবে এখন তারা বেশ সুঠাম হওয়ায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে হালকা সেদ্ধ মাংস এবং মাছ খাওনোর অভ্যাস করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।

এই চার যুবক এর একজন হৃদয় জানান, এখন থেকে তাদের নিজে নিজে শিকার করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করার জন্য চেষ্টা চলছে খুব দ্রুতই তাদের নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করে দেয়া হবে।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় সোহেল শ্যামের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চাগুলোকে ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছেন চার যুবক। এই দুধ অর্থাৎ ক্যাট মিল্ক সাধারণতভাবে শুধু বিড়াল জাতীয় প্রাণীর জন্য, যাকে ক্যাট মিল্ক বলা হয় এগুলো বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এক প্যাকেট দুধে মাত্র ৩ দিন যায়। যদিও বর্তমানে বাচ্চাদের খাবারের সময় এবং পরিমাণ বেড়েছে ফলে এক প্যাকেটে দুই দিন যাচ্ছে।

একেকটি প্যাকেটের মূল্য ৬৫০ টাকা, যা তারা আপাতত নিজেরাই বহন করছেন। তবে বনবিভাগ জানিয়েছেন সমস্ত খরচ তারা দিয়ে দিবেন। তবে বাচ্চাগুলো বাসায় বড় একটা জায়গা দখল করে আছে সেই সাথে এদের পরিচর্যার জন্য সর্বক্ষণই একজন পাশে থাকতে হচ্ছে। তবুও বিরক্তি নেই তাদের বরং তারা আনন্দিত।

জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক হৃদয় দেবনাথ জানান, প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ এই বন্যপ্রাণী। হয়তো এই ৬টি বাচ্চার মাকে আমাদের মতো কোন এক মানুষ মেরে ফেলেছে বা ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বন্যপ্রাণী রক্ষা করা কতটা যে প্রয়োজন তা যদি মানুষ উপলদ্ধি করতে পারতো হয়তো এমন করত না ।

তিনি আরও জানান, তিনি বন্যপ্রাণী রক্ষায় সর্বদাই সোচ্চার, ব্যাক্তিগত উদ্যোগে শিকারির কাছ থেকে প্রায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বিপন্ন মহাবিপন্ন পাখি উদ্ধার করে পরিচর্যা শেষে বনবিভাগের লোকজনকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় মুক্ত করে দেন যা দেশের সগীর্ষস্থানীয় দৈনিক সংবাদ পত্রে প্রতিবেদন প্রকাশও হচ্ছে।

একই অনুভূতি অপর যুবক খোকন সিংহের। তিনি জানান, এত ছোট বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন প্রকৃতিতে তারা তাদের মায়ের থেকে যে সেবা পেত তাতো আমরা দিতে পারব না। তবে আমরা আনন্দিত এদের জীবন রক্ষায় সামান্য হলেও অবদান রাখতে পারছি ।

তিনি জানান, আমরা চারজন মিলে যতটা পারছি খরচ মেটাচ্ছি। এত ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছুই নেই। গরুর দুধ বা প্যাকেট দুধ খাওয়ালে হয়তো পেট খারাপ করে এরা মারা যেতো।বিশেষ কিছু দুধ ঢাকা থেকে এনে খাওয়াচ্ছি।

তারা চারজনই জানান,এই মেছো বাঘের বাচ্চাগুলোকে বড় করে বনে টিকে থাকার লড়াই এবং শিকার করে খাবার খাবার কৌশল রপ্ত করানোটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এদেরকে বড় একটা শেডে স্থানান্তর করব এবং বড় হয়ে ওটার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে শিকার ধরা শেখানোর চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জানান, বন্যপ্রাণী নিয়ে এই চার যুবকের কাজগুলো আমি সংবাদপত্রে দেখি তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ|এর আগে মৌলভীবাজারে এ কাজ গুলো তানিয়া খান করতো কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যুর পর এ স্থানটা শুন্য হয়ে যায়|এরই মধ্যে এই চার যুবক বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে এই শুন্যস্থানটা পূরণ করেছেন|নিরীহ বন্যপ্রাণীদের রক্ষার্থে এই চার যুবকের মতো অন্যরাও এগিয়ে আসবেন আমি আশাবাদী|

ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালক মিহির কুমার দো বলেন,নিরীহ বন্যপ্রাণীদের ভালোবেসে যেভাবে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষার্থে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়| এই চার যুবকের মতো প্রত্যেককেই বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে এগিয়ে আসার জন্য আমার অনুরোধ রইলো|এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার যতটুকু অধিকার রয়েছে ঠিক সমভাবে বন্যপ্রাণীদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে|প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে|

Bootstrap Image Preview