বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকলে সেটা কি টুর্নামেন্ট হবে? শুরুতে এমন প্রশ্ন ছিল অনেকেরই। এক সময় বিপিএল হওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তাও দেখা দেয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দিয়ে, তাদের কাছে বোর্ড কি জবাব দিয়ে বিপিএল শুরু করবে বিসিবি- তা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে বিপিএল শুরুর ঘোষণা দিলেই সবাই চুপচাপ হয়ে যান। তারপরও প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে সবকিছু নিয়ে ছিল অনিশ্চিয়তা। অথচ বিপিএল শেষে অনেকেই এই আসরকে অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট হিসেবেও এখন দাবি করছেন!
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বিপিএলে এমন কোনো আসর নেই যে ছোট-বড় ঝামেলা হয়নি। এমনকি ম্যাচের আগে নিয়মও বদলাতে হয়েছে। ফিক্সিং, ম্যাচ পাতানো আভাসসহ অনেক কিছুই হয়েছে। অথচ এবার সিলেট থান্ডারের বোলার ক্রিসমার সান্টকির একটি ‘নো’ বল নিয়ে সন্দেহ ছাড়া কোনো বিতর্কই হয়নি। ছয়টি দল স্পন্সর দিয়ে চালিয়েছে বিসিবি। একটি দলের দায়িত্বে ছিল বোর্ডই। যারা স্পন্সর হিসেবে দল নিয়েছে তারা কখনই নিজেদের অসন্তোষের কথা জানায়নি। শুরুতে তারকা খেলোয়াড়দের খুবই অভাব ছিল। পরে শহীদ আফ্রিদি, আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে শেন ওয়াটসন-ক্রিস গেইলরা টুর্নামেন্টের মান বাড়িয়ে দিয়েছে। দাভিদ মালান ও আন্দ্রে ফ্লেচারের সঙ্গে সেঞ্চুরি পেয়েছেন দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তও। মাঠের খেলা এবার অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে উইকেটগুলোতে রান হয়েছে প্রচুর। খুলনা টাইগার্স দুইশ’র বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে। যে মিরপুরে বড় স্কোর তোলা দুরূহ ছিল এতদিন, সেই উইকেটগুলোও এবার রানপ্রসবা হয়েছে। দেশের চিরচারিত প্রথা ভেঙে এবার স্পিনারদের পেছনে ঠেলে দিয়ে ভালো করেছেন পেসাররাই। বিপিএলের শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছেন পেসাররাই। শেষ পর্যন্তও তারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে।
সাত দলের ছয়টিতেই এবার বিদেশি কোচ ছিল। দেশের একমাত্র কোচ হিসেবে ঢাকা প্লাটুনের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তার লড়াইটা ছিল বাকিদের সঙ্গে। কিন্তু এলিমিনেটর পর্বের তার দৌড় থেকে যায়। টুর্নামেন্ট নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এবার উইকেট যে এতো ভালো হবে সেটা জানলে আমার দলটাও অন্যরকম হতো। দেশি খেলোয়াড়দের ওপর কোপ পড়ত।’ পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমার দেখামতে অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট হয়েছে। সবকিছু দারুণ ছিল। বিশেষ করে অনেক রান হয়েছে। ম্যাচগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচই তো সবাই দেখতে চায়।’
শেষ চার থেকে বিদায় নেয়া ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা বলেন, ‘মাঠের খেলা অত্যন্ত এবার খুব ভালো হয়েছে।’ ফাইনালিস্ট রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল ভূয়সী প্রসংশা করে বলেন, ‘উইকেটে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এরকম এগোতে পারলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য ভালো হবে। উইকেটগুলো ভালো ছিল।’