আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গ্রামে এসেছি। এসেই তেঁতুলিয়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র রেকর্ডিং পর্বে যোগ দিই। অবশ্য ঢাকা থাকতেই হানিফ সংকেত ও ইত্যাদি টিমের মিঠুর সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য তেঁতুলিয়া কে বেছে নেবার জন্য। কিন্তু ইত্যাদি মঞ্চে ধারণ অনুষ্ঠানে গিয়ে যে দু:খজনক পরিস্থিতি দেখলাম তা কল্পনাও করিনি।
পাইলট স্কুল মাঠে তিল ধারণের জায়গা নেই! পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা থেকেও মানুষজন এসেছিল। জায়গা না পেয়ে আশপাশের বিল্ডিং গুলোতে মানুষ অবস্থান নিচ্ছিল। একটি পুৱাতন টিনের ঘরের ওপরে প্রচুর মানুষজন উঠলে আমি পুলিশের এএসপি সুদর্শনকে বললাম, দ্রুত লোকগুলো নামানোর ব্যবস্থা করুন। না হয় যেকোনো মুহূর্তে এটা ধ্বসে যেতে পারে। এ কথা বলার ১৫ মিনিটের মাথায় সেই টিনের ঘরটি মানুষজনকে নিয়ে ধ্বসে পড়ে। পরে শুনলাম, কয়েকজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
জাগ্রত তেঁতুলিয়া সহ অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে তেঁতুলিয়ায়। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার জন্য এলাকার তরুণরা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু অল্প সংখ্যক তরুণকে দেখলাম সেখানে দায়িত্ব পালন করতে। আমাদের জাগ্রত তেঁতুলিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা কার্ড পেয়েছে মাত্র তিনটি! অথচ স্বেচ্ছাসেবীদেরকে কার্ড না দিয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে দিলে তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু সেটা করা হয়নি অজানা কারণে। যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে জীবনবাজি রেখে তাদের কেউ নাকি আয়োজকরা নানা গালিগালাজ করেছে! এত বড় একটি অনুষ্ঠানে আরো পর্যাপ্ত পুলিশের দরকার ছিল। প্রচুর নারী দর্শক থাকলেও সেখানে কোনো নারী পুলিশ চোখে পড়ল না!
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা বেলা পাঁচটায় কিন্তু সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছিল না। মানুষজনকে বসার জন্য যে চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল তাও পর্যাপ্ত নয়। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সেই হারে স্বেচ্ছাসেবী দেখলাম না, যে হারে স্বেচ্ছাসেবী থাকার দরকার ছিল। এর জন্য অবশ্য অনেকেই জেলা প্রশাসনকে দায়ী করছিল যে, প্রশাসন একাই সব দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কাউকে তেমন কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়নি। পঞ্চগড় এবং তেঁতুলিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকরাও আমাকে এমন অভিযোগ করলেন যে অনুষ্ঠান বিষয়ে তাদের কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি; নেয়া হয়নি কোন মতামতও।
অনুষ্ঠান হচ্ছে তেঁতুলিয়ায় অথচ বাইরের লোকজনকে দিয়ে মঞ্চস্থল ভর্তি করে রাখা হয়েছে, তেঁতুলিয়াবাসীকে প্রকৃতই বঞ্চিত হয়েছে এমন অভিযোগ অনেকের। এত মানুষের ভিড়ে নারীদের কান্নাকাটিৱ শব্দ শুনলাম। ডিসি এবং এসপি মহোদ্বয় দুজনেই মঞ্চে ওঠে জনগনকে শান্ত হবার জন্য বারবার অনুরোধ করার পরও মানুষজনকে সামলানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে হানিফ সংকেত নিজেই মাইক নিয়ে অনুরোধ করলেও পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছিল না এবং আশংকা হচ্ছিল আদৌ এখানে অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা। অনেক পরে বিশৃংখলার মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আমার সামনে দেখলাম কয়েকজন লোক কিছু নারীকে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে কান্নাকাটি করতে করতে। পরে কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে জানতে পারি, সেখানে নাকি নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছিল! ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দেখালেন কিছু নকল পাশ যেগুলো প্রিন্ট করে এনে অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এবং উনি দুজনেই মাটিতে হাটু গেড়ে বসে অনুষ্ঠান দেখছিলাম। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হল, অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয় এর স্টেনো টাইপিস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
সার্বিক ঘটনাটিতে স্থানীয় তারুন্যদীপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও একজন সংবাদকর্মী হিসাবে হিসাবে আমি চরমভাবে দুঃখিত, ব্যথিত ও মর্মাহত। দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক এসব ঘটনার জন্য কাকে দায়ী করা যায়? নাকি এটা আয়োজক বা প্রশাসনের ব্যর্থতা? আমাদের এলাকার মানুষজনকে সারাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবেই জানে। কিন্তু গতকাল আপনারা এটা কি দেখালেন?? এ লজ্জা কার? পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
– আতাউর রহমান কাবুল-এর ফেসবুক পোস্ট থেকে।
বিঃদ্রঃ এই বিভাগে প্রকাশিত লেখার মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব।