সরিষাক্ষেতে মৌ চাষে ঝুঁকছেন যশোরের চাষিরা

বাণিজ্যিকভাবে যশোরে সরিষা ও মৌ চাষ শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ২৬৮ হেক্টর জমির সরিষাক্ষেতে ৯৭৯টি বক্সে মৌ চাষ করা হয়েছে। এবার মৌ চাষ থেকে প্রায় ৪ হাজার মধু উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খরচ কম, ঝামেলা না থাকায় এ বছর বেশি সরিষা ও মৌ চাষ করা হয়েছে।

যশোর সদর উপজেলার হামিদপুরের মৌ চাষি আসমত আলী জানান, চলতি মৌসুমে বারি-১৪ সরিষা দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছি। জমির পাশে ৪৫টি মৌ চাষের বক্স বসিয়ে ২৫ কেজি মধু পেয়েছি। আরও এক মাস ধরে সরিষার ফুলের মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এসময় অন্তত আরও ১০ থেকে ১৫ কেজি মধু পাওয়া যাবে।

একই গ্রামের কৃষক আবু তালেব জানান, সরিষা চাষের সঙ্গে মাঠে মাঠে মধু সংগ্রহ ধুম পড়েছে। অধিকাংশ সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বক্স স্থাপন করা হয়েছে। বক্সে থাকা লাখ লাখ মৌমাছি সরিষা ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। আর সরিষার উৎপাদন বাড়ছে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, যশোরের আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। গত বছর ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। চলতি বছরে ১ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে ৯৭৯টি বক্স বসিয়ে মৌ চাষ করা হচ্ছে। সরিষার ফুল থেকে এবার ৪ হাজার কেজি মধু আহরণ করা সম্ভব হবে। গেল বছরে যশোরে মধু সংগ্রহ করা হয় ৩ হাজার ৬১২ কেজি।

যশোর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার আবু ইছা জানান, মৌ চাষে কৃষকদের এতটা আগ্রহ ছিল না। তাদেরকে বোঝানোর পর তারা মৌ চাষ করছে। খরচ কম, ঝামেলা নেই তারপর ৫ থেকে ৭ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা যায়। এটি একটি লাভজনক চাষ। তাই যশোরের কৃষকরা মৌ চাষে ঝুঁকে পড়ছে।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই জমিতে সরিষা ও মধু চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সরিষা ফলন বাড়ে। তাই সরিষার পাশাপাশি মধু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, সরিষাক্ষেতে মৌ চাষ করলে পরাগায়ন ভালো হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সরিষাক্ষেতে মৌ চাষ বাড়ছে। সে জন্য মৌ বক্সসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে মৌ চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছর ৪ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।