দেশে যা বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও ঠিক একই কথা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর মুখে-‘আমরা নিরাপত্তা ও ঝুঁকির বিষয়টি দেশে রেখে এসেছি। খেলতে যখন এসেছি, তখন আর নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে অত চিন্তা করছি না। তার চেয়ে আমরা মাঠের ক্রিকেট নিয়েই মাথা ঘামাতে চাই। আমাদের ভাবনায় এখন শুধুই টি-টোয়েন্টি সিরিজ।’
অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগেই বাংলাদেশ অধিনায়ক একটি বড় বার্তা দিয়ে ফেলেছেন। তা হলো, বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তানে আবার ক্রিকেট ফেরানোর সব দায়দায়িত্ব নিয়েই যায়নি। টাইগারদের আসল লক্ষ্য ভালো খেলা এবং স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারানো।
ওয়ানডেতে একটু বেশি ভালো খেলে। তবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে কোনো ফরম্যাটেই বাইরের চেয়ে ভালো দল, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। একই কথা খাটে পাকিস্তানের জন্যও। পাকিস্তানিরা দেশের মাটিতে সবসময়ই সমৃদ্ধ দল। প্রতিপক্ষ হিসেবেও কঠিন। সেই দলের গায়ে আবার টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ‘এক নম্বর’ তকমা। খুব স্বাভাকিভাবেই সিরিজ জেতা সহজ কাজ হবে না।
আর পাকিস্তানের মাটিতে টাইগারদের ইতিহাস পরিসংখ্যানও তেমন ভালো নয়। এক যুগ আগে ২০০৮ সালের এপ্রিলে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টাইগারররা চরমভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিল।
করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচে ১০২ রানের বিরাট ব্যবধানে হেরেছিলেন আশরাফুল, মাশরাফি, তামিম, আফতাব, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ-রাজ্জাকরা। পাকিস্তানিদের করা ২০৩ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১০১ রানে।
সেটাই শেষ কথা নয়। সেই খেলায় বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল চরম খারাপ। ওই ম্যাচে টাইগারদের শেষ ৮ উইকেট পড়েছিল মাত্র ১৬ রানে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টাইগারদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারার ম্যাচ। ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে এরপর আর কখনো অত বড় ব্যবধানে হারেনি বাংলাদেশ।
সেই চরমভাবে নাকাল হওয়া দলের দুজন আছেন এবারের বাংলাদেশ দলেও। একজন হলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, অন্যজন তামিম ইকবাল। এছাড়া দলের সাথে পাকিস্তান যাওয়া বহরের বাকি ১৩ জন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই প্রথম পাকিস্তানে।
প্রায় একইরকম চিত্র পাকিস্তান দলেরও। সেই ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল হওয়া ম্যাচ খেলা একজন মাত্র ক্রিকেটার আছেন এখনকার পাকিস্তান স্কোয়াডে, তিনি শোয়েব মালিক। প্রসঙ্গত, মালিক ছিলেন ঐ সময় পাকিস্তান অধিনায়ক। আর তখন বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
তবে এটা ঠিক যে, সেই এক যুগ আগে টাইগাররা যতই খারাপ খেলুক না কেন, সময়ের সাথে সাথে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও উন্নতি ঘটেছে। এখন বাংলাদেশ ছোট ফরম্যাটেও আগের চেয়ে দল হিসেবে উন্নতি করেছে।
এই তো গত নভেম্বরে ভারতের মাটিতে গিয়ে ভারতীয়দের এক ম্যাচে হারিয়ে এসেছে টাইগাররা। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে জেতার পর সিরিজ জেতারও সুযোগ ছিল, শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হেরে দেশে ফিরলেও সামগ্রিক পারফরম্যান্স মন্দ ছিল না মাহমুদউল্লাহদের।
কাজেই বাংলাদেশকে নিয়ে এবার আশা করাই যায়। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান এক নম্বর, আর সেখানে বাংলাদেশ ৯‘এ। তারপরও পাকিস্তানিদের সাম্প্রতিক বিশেষ করে নিকট অতীতের পরিসংখ্যান কিন্তু মোটেই ভালো নয়। গত বছর ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে মাত্র ১টিতে।
এছাড়া বাবর আজমের অধিনায়কত্বে যে দলটি খেলবে, তাতে শোয়েব মালিক আর মোহাম্মদ হাফিজের মত দুজন অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফরমারকে নতুনভাবে নেওয়া হলেও দলটির বোলিংয়ে বিশেষ করে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টে পরিনণত ও প্রতিষ্ঠিত ফাস্টবোলার খুব কম। সে অর্থে কেউই নেই। মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ আর মোহাম্মদ ইরফানের একজনও নেই।
আর বাংলাদেশের যে দলটি এখন পাকিস্তানে, তারা প্রায় সবাই ফর্মে। বিপিএলে ভালো খেলে মাঠে আলো ছড়িয়েই পাকিস্তানের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নামার প্রহর গুনছেন।
এক যুগ আগে চরম নাস্তানাবুদ হয়ে দেশে ফেরা টাইগারা যদি এবার পাকিস্তান থেকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরে, তাতেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
আশা জাগাচ্ছে ইতিহাস। মাস তিনেক আগে পাকিস্তান গিয়ে তাদের ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে শ্রীলঙ্কা। সেটাও লঙ্কানদের এক নম্বর দল ছিল না। সেখানে এবার মুশফিক ছাড়া সবাই আছেন বাংলাদেশ দলে। কাজেই ভালো কিছুর আশা করাই যায়।