Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ শনিবার, জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নবীগঞ্জে ১০ টাকার কৃষি একাউন্ট খুলতে দিতে হয় ৫০০ টাকা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:০৬ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:০৬ PM

bdmorning Image Preview


‘সারাদিন বসে থাকলেও কাম হইতো নায়, আনা পয়সার একাউন্ট খোলার টাইম নাই আমরার।’ সাধারণ কৃষকরা ১০ টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলতে ব্যাংকে গেলে এ রকমই আচরণ করেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা।

সরকার কৃষকের দোরগোঁড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালালেও, কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। বোরো মৌসুমের পর এবার আমন মৌসুমে সরকার খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়। যাতে কৃষককে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা যায় এ জন্য ১০ টাকা দিয়ে কৃষি একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে এসে সাধারণ কৃষক পড়েছে চরম হয়রানির মধ্যে। শুনতে হচ্ছে নানান কটূক্তি।

দিনের পর দিন ব্যাংকে ধরণা দিয়েও একাউন্ট খুলতে না পেরে হতাশ এসব কৃষক। এ ব্যাপারে নির্বিকার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সরকার ১০ টাকায় এ ধরনের একাউন্ট খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

কৃষকদের অভিযোগ- কৃষি একাউন্ট খোলার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা। কৃষকদের ১০ টাকার বিনিময়ে একাউন্ট খুলতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ১০ টাকার কৃষি একাউন্ট খুলতে ৫০০ বা তার অধিক টাকা আদায় করেন কৃষি ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারা। একাউন্ট খোলার পর সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করে আনতেও তাদেরকে দিতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা ‘সার্ভিস চার্জ বাবদ’। কর্মকর্তাদের এহেন কাণ্ডে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া তাদের মতো পরিচালনা করছেন ব্যাংক কার্যক্রম। এ ছাড়া অফিসের নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে গিয়েও অনেক কর্মকর্তাদের ব্যাংকে পাওয়া যায় না।

জানা গেছে, কৃষকদের কথা চিন্তা করে সরকার ২০১০ সালে ১০ টাকার একাউন্ট খোলা শুরু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রাষ্ট্রীয় ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর বিশেষ উদ্যোগে ১০ টাকা দিয়ে কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। নবীগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত কৃষি ব্যাংক উপজেলার সকল কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক হওয়ার আশা করেন। কারণ গুদামে ধান বিক্রির পর উপজেলার অধিকাংশ কৃষক কৃষি ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় একাউন্ট খোলার জন্য যান। এ ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে প্রত্যেক কৃষককে ৫০০ টাকা বা তার ও অধিক টাকা দিতে হচ্ছে। টাকা দিতে রাজি না হলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রান্তিক জনপদের কৃষকদের। পড়তে হচ্ছে নানা বিড়াম্বনায়।

সূত্রে জানা গেছে- অতিরিক্ত টাকা নিয়ে একাউন্ট খোলার কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষি ব্যাংকের নবীগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ চন্দ্র সাহা। কৃষকদের অভিযোগ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পরস্পর যোগসাজশে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নিচ্ছে।

ব্যাংকে গেলে অরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য নামে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ টাকা দিয়ে কৃষি একাউন্ট তারা খোলেন না। একাউন্ট খুলতে হলে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

ওয়াহিদ মিয়া, আব্দুল মন্নান, জব্বার মিয়া, আব্দুর রহিম, জয়নাল মিয়াসহ অনেক ভুক্তভোগী কৃষক জানান, গুদামে ধান বিক্রির পর কৃষি ব্যাংকে গেলে প্রকাশ্যেই অফিসার কৃষি একাউন্ট খুলতে হলে ৫০০ টাকা দিতে বলেন। যারা ৫০০ টাকা দিচ্ছে তাদের একাউন্ট হচ্ছে আর যারা টাকা দিচ্ছে না তাদেরকে ঘুরাতে থাকেন। কৃষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এসব অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান কৃষকরা। 

কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষি ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ চন্দ্র সাহার বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হলে ৫০০ টাকা দিতে হবে। আর সবার একাউন্ট আমরা খুলি না’।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কৃষি কার্ড যাদের রয়েছে তারা ১০ টাকার কৃষি একাউন্ট খুলতে পারবে। কৃষি ব্যাংকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। 

Bootstrap Image Preview