Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে আটক আজহারীর মাহফিলে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করা সেই ১১ জন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৯:১৭ PM
আপডেট: ২৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৯:১৭ PM

bdmorning Image Preview


আজহারীর মাহফিলে ধর্মান্তরিত সেই ১১ জনকে আটকের আসল কারণ জানা গেছে। পুলিশ বলছে, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে ধর্মান্তরিত ১১ জন ভারতীয় নাগরিক।

উপজেলার হাজীপুর পাটোয়ারীর বাড়িতে শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত এক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে তারা হিন্দু পরিচয়ে কলেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। শনিবার রাতে ভারতীয় পাসপোর্টসহ তাদের আটক করেছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার রাতে মাহফিলে বয়ান করেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী।

পুলিশ জানায়, ধর্মান্তরিত ১১ জনের কাছ থেকে ভারতের বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তারা ভারতের নাগরিক। দুই মাসের ভিসা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসে তারা। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা ভারত ফিরে যায়নি।

গত ডিসেম্বরে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে বাংলাদেশি জন্মসনদ তৈরি করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দ্রুত ভারত পাঠিয়ে দেয়া হবে।

জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর ইছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নারায়ণপুর গ্রামের ডাক্তার আ. হাই বাড়ির মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগমের ছেলে মনির হোসেন কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে যায়। সেখানে প্রতারণার মাধ্যমে ভাড়াটে বাসার চাচাতো ও জেঠাতো বোনকে বিয়ে করেন।

মনির হোসেনের প্রথম স্ত্রী রেখা অধিকারীর সংসারে মরিয়ম বেগম, শেফালী বেগম, মারিয়া আক্তার, নুসরাত জাহান, জান্নাত আক্তার এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সুজাতা অধিকারীর সংসারে আ. করিম, আয়েশা আক্তার ও আবদুল্লাহর জম্ম হয়। ভারতে থাকাবস্থায় মনির হোসেন তার বড় মেয়ে শেফালী বেগমকে বাংলাদেশে বোন পারভিন বেগমের ছেলে পারভেজ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেয়।

কয়েক মাস আগে মনির পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা গ্রামে বসবাস শুরু করেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর মুসলমান হিসেবে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করেন। শুধু মনির ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন করেন।

সদ্য ধর্মান্তরিত মনিরের বরাত দিয়ে ছোট ভাই জহির উদ্দিন বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি-ঘরের ঠিকানা তিনি কাউকে বলতে পারেননি। কারো মাধ্যমে তিনি দেশ থেকে ভারতের কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি বন্দিখানায় ছিলেন। মুক্তি পেলেও তিনি দেশে আসতে পারেননি। কলকাতায় থাকতে গিয়ে তিনি নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিতেন।

এরপর এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেন। তার সংসারে সন্তান আসে। পরে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। এখন তার দুই সংসারে ৮ সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি রামগঞ্জে চলে আসেন।

গ্রামের লিটন হাজারীসহ কয়েকজন বলেন, ১১ জনের মুসলমান নিবন্ধন থাকার পরও শুক্রবার মিজানুর রহমান আজহারী মাহফিলে মনির হোসেনকে সংকর অধিকারী, স্ত্রী রেখা অধিকারী ও সুজাতা অধিকারী, সন্তান মরিয়মকে মিতালী, শেফালীকে শেফালী বেগম, মারিয়াকে রুপালী, নুসরাতকে কোয়েল, জান্নাতকে শ্যামলী, আ. করিমকে রাজা, আয়েশাকে সুমা, আবদুল্লাহকে রাজেস এবং নাতি আ. রহমানকে সুর্য দেখিয়ে ধর্মান্তর হওয়ার ঘোষণা দেয়।

মাহফিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা যে আগে থেকেই মুসলমান, এ বিষয়ে জানা ছিল না। এই মুহূর্তে আমি বেশি কিছু বলতে পারব না।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ধর্মান্তরিত মনিরসহ ১১ জনের কাছ থেকে ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাসপোর্টে মনিরের নাম শঙ্কর অধিকারী। তারা ভারতের নাগরিক। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদের আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। পরে সঠিক প্রক্রিয়ায় তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হবে।

রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ১১ জনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview