Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফেসবুকে লাইভ, ১০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন বাবা-মা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৬:১৯ PM
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৬:১৯ PM

bdmorning Image Preview


মাত্র সাত বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় শফিকুল ইসলাম। হারিয়ে যাওয়ার পর বহু দিন সন্তানের খোঁজ করেছেন বাবা-মা। একসময় সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধুলিহর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন।

তবে ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ১০ বছর পর বাবা-মা ফিরে ফেলেন তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। ফেসবুকের একটি লাইভ সুযোগ করে দেয় হারিয়ে যাওয়া শফিককে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে।

গতকাল রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁওয়ের কাবুল মিয়ার বাড়িতে হাজির হন। তারা বুকে টেনে নেন প্রিয় সন্তান শফিককে। ঢাকার রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়ে এতদিন শফিককে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন শ্রীমঙ্গলের কাবুল মিয়া।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শিশু শফিকের বয়স তখন মাত্র সাত বছর। ওই সময়ে একদিন বাড়ি থেকে বের হয় শফিক। ঢাকাগামী গাড়িতে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। অচেনা ঢাকা শহরে গিয়ে বিপদে পড়ে শিশুটি। নিজের গ্রামের ঠিকানা এমনকি বাবা-মায়ের নামও বলতে পারত না সে।

একসময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এ অবস্থায় শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী কাবুল মিয়া শিশুটিকে কুড়িয়ে নেন। বাড়িতে নিয়ে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁও এলাকায় আশ্রয়দাতা কাবুল মিয়ার আট মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গে বেড়ে ওঠে শফিক। তিনি শফিকের বাবা-মায়ের খোঁজ করছিলেন।

গত ২৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরকান ইউনিয়নের শ্রীগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শেখ জসিম কুড়িয়ে পাওয়া শফিককে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরে ছেলেটির প্রকৃত বাবা-মায়ের সন্ধান চান। এ ফেসবুক লাইভ ভাইরাল হয়ে যায়।

বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে খবর আসে শফিকের বাবা-মায়ের কাছে। ফেসবুক লাইভ দেখে আর কাহিনি শুনে নিজের সন্তানকে চিনতে ভুল করেননি বাবা-মা। যোগাযোগ করেন শ্রীমঙ্গলে। শফিকের বাবা-মা ছুটে যান সেখানে। তখনই শফিক জানতে পারে তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধুলিহর গ্রামে।

পালক বাবা কাবুল মিয়া বলেন, শিশুটিকে রাস্তায় দেখে ফেলে আসতে বিবেক বাধা দেয়। তাই শফিককে বাড়ি নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই। খারাপ লাগলেও তাকে প্রকৃত বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি আনন্দিত।

সমাজকর্মী শেখ জসিম বলেন, তার মা-বাবা, চাচা ও বড় ভাই-ভাবি, ভাতিজা রোববার তাকে নিতে এসেছে। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে শফিকের বাবা-মা, বড় ভাই-চাচাসহ অন্য আত্মীয়রা শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের দিকে রওনা দিয়েছেন। বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

শফিককে ফিরে পেতে হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন কবির এবং পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার হাসান জিতু সহযোগিতা করেছেন।

শফিক জানায়, আমি শুধু গ্রামের নাম ধুলিহর বলতে পারতাম। আর কিছুই জানতাম না। আমি বাবা-মায়ের সন্ধান পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। কিন্তু পালক বাবার জন্য খারাপ লাগছে। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন।

শফিকের বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন বলেন, আজ নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।

Bootstrap Image Preview