বাংলাদেশি নাগরিকরা এখনই দেশ ছাড়ুন, না হলে ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা পার্টির স্টাইলে’ সবাইকে মুম্বাই থেকে তাড়ানো হবে। এভাবে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা হিসেবে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে ভারতের মুম্বাইতে।
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল মহারাষ্ট্র নব নির্মাণ সেনার (এমএনএস) নতুন দলীয় পতাকায় দলের প্রধান রাজ ঠাকরে ও তার পুত্র অমিত ঠাকরের ছবি দিয়ে একাধিক জায়গায় এই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।
শহরের অন্যতম প্রধান এই জায়গায় ছড়িয়ে পরা পোস্টারটিতে দেখা যাচ্ছে, একদিকে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা পার্টির ফ্ল্যাগ যেখানে গেরুয়া দিয়ে ছত্রপতি শিবাজির রয়েল সিল রয়েছে তেমনই অন্যদিকে রাজ ঠাকরে এবং পুত্র অমিত ঠাকরে যে সদ্য পার্টিতে যোগদান করেছেন।
পোস্টারের ছবি ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ নেওয়া হয়েছে। মোদী সরকারকে অবৈধ পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদকে সমর্থন জানানোর দু’সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই এই ঘটনা চোখে পরেছে।
মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা পার্টি উচ্ছেদের সমর্থনে ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ প্রতিবাদ মিছিল ডেকেছে। ডিসেম্বরের পর থেকেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশের সবপ্রান্তেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে তারকা ব্যাক্তিত্বরা।
সমালোচকরা জানিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার নিরিখে এই আইন মুসলিমদের বিরোধী বলেই জানিয়েছেন অনেকেই।
গত ২৩ জানুয়ারি গেরুয়া রং এবং শিবাজির রাজ মোহরের ছবি দেওয়া নতুন দলীয় পতাকার উদ্বোধন করেছিলেন রাজ ঠাকরে। একইসঙ্গে বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিএএ, এনআরসি–র পক্ষে সওয়াল করেন।
যদিও রাজ বলেছিলেন, সিএএ নিয়ে বিতর্কে তাঁর মত রয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের হঠানোর দাবিতে আগামী রবিবার বিশাল মিছিলের আয়োজন করেছে এমএনএস। বালাসাহেব ঠাকরের সঙ্গে উত্তরসূরীর অধিকারের মনোমালিন্যের জেরে শিবসেনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাল ঠাকরের ভাইপো তথা তৎকালীন শিবসেনা নেতা রাজ ঠাকরে।
২০০৬ সালে মহারাষ্ট্র নবনির্বাণ সেনা বা এমএনএস নামে তৈরি করেছিলেন নিজের দল। হয়ত ভেবেছিলেন শান্ত স্বভাবের খুড়তুতো ভাই উদ্ধব নয়, তাঁর মতো দাপুটে নেতার দিকেই ঝুঁকবেন অধিকাংশ শিবসেনা কর্মী, সমর্থক এবং তাবৎ মারাঠিরা। কিন্তু পরপর অনেকগুলো ভোট পেরিয়ে গেলেও এখনও পায়ের তলায় জমি খুঁজে পায়নি এমএনএস। কারণ জাত্যাভিমানী মারাঠারা বাল ঠাকরের শিবসেনাকেই সমর্থন করেছে। আর শিবসেনা–বিজেপি জোট থাকায় এবং শিবসেনা ত্যাগ করে যাওয়ায় বিজেপির সঙ্গ ধরতে পারেননি রাজ। দলীয় নীতির কারণেই কংগ্রেস–এনসিপি জোটের দ্বারস্থও হতে পারেনননি।
ক্রমেই রাজ বুঝতে পারছিলেন আর বেশিদিন হয়ত এভাবে একা লড়াই করা সম্ভব নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে মতান্তরের জেরে উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেরি করেননি রাজ। বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।