Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

গলায় রশি বেঁধে সন্তানকে টেনে টেনে নেত্রকোনায় ভিক্ষা করেন মা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৮:১৮ PM
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৮:১৮ PM

bdmorning Image Preview


গলায় রসি বেঁধে পশুর মতো নিজের প্রতিবন্ধী সন্তানকে টেনে টেনে ভিক্ষা করেন এক মা। বসত করেন অন্যজনের বাড়ির বারান্দার একটি ছাপড়া ঘরে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।

সমাজের চোখে বিষয়টি দৃষ্টিকটু হলেও সাহায্যের হাত বাড়াতে কেউই এগিয়ে আসেননি। প্রতিদিন এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ছুটে দিনাতিপাত করলেও জীবন সায়াহ্নে এসে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মা।

জীবনের পরন্ত বেলায় ছেলের চিকিৎসা আর প্রতিবন্ধী ছেলের মাথাগুজার ঠাঁই চান তিনি।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে চললেও এই হতভাগা মা ছেলের চিকিৎসা আর মাথা গোজার একটু জায়গার জন্য করছেন করুণ আকুতি।

নিজের সন্তানের গলায় পশুর মতো রশি বেঁধে টেনে টেনে ভিক্ষা করেন প্রতিবন্ধী জাকিরের মা। প্রতিদিন এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে ছুটে চলেন বেঁচে থাকার তাগিদে। বিষয়টি দেখে অনেকেরই খারাপ লাগে, কিন্তু সাহায্যে এগিয়ে আসননি কেউ।

সহায় সম্বলহীন বিধমা মায়ের প্রতিবন্ধী সন্তান জাকির হোসেন। শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়েই জন্ম নেয় জাকির। জন্মের কিছুদিন পর জাকির হারায় দরিদ্র বাবাকেও। এরপর থেকেই একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মা এভাবেই ঘুরে বেড়ান জীবনের তাগিদে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার শৈলাডহর গ্রামের প্রতিবন্ধী জাকিরের মা জামেনা খাতুন বলেন, শরীর নিয়েই জন্ম হয়েছে জাকিরের। চিকিৎসা করাতে পারি নাই। শরীল আর চলে না। ছেলেকে রশি দিয়ে গলায় বেঁধে টেনে টেনে ভিক্ষা করি। মিললে খাই। খাবার না পেলে ছেলেটা আমাকে মারে, কামরায়। মাঝে মাঝে ছুটে যায়। মানুষে পাগল বলে ধওয়া আর মারধর করে। আমি মরলে কী হবে ছেলেটার?

ভিক্ষুক মা আর প্রতিবন্ধী সন্তানের সাহায্যে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি করেন স্থানীয়রাও। প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসায় সবাইকে এগিয়ে আসার দাবি তাদের।

পৌরসভার শৈলাডহর গ্রামের প্রতিবেশী বিলকিস বেগম, হালিমা বেগম ও বাকের আলম বলেন, বাড়িতে বেঁধে রেখে গেলে, দড়ি ছিঁড়ে চলে যায়। পথেঘাটে মানুষে মারধর করে। জাকিরের মা এভাবে দড়িতে বেঁধে ভিক্ষা করলে সমাজের চোখে খুব খারাপ লাগে। পশুর মতো মানুষকে বেঁধে নিয়ে ঘুরে। আমরা সাধ্যমত সাহায্য করি। ঘরদোর নেই। আপন কেউ নেই। একজনের ঘরের ছাপড়া একটি বারান্দায় থাকে। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে। খুব খারাপ লাগে। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে অসহায় মা ও প্রতিবন্ধী ছেলের একটা ব্যবস্থা হতো।

দুর্গাপুর উপজেলার দক্ষিণ ভবানিপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলেন, এই ছেলেটা ও তার মাকে প্রায়ই দুর্গাপুরে দেখা যায়। বিষয়টা খুবই অমানবিক। একটা মানুষকে গলায় রসি দিয়ে ঘুরানো এটা খুব অমানবিক একটা কাজ। অসহায় এই মায়ের পাশে বিত্তবান এবং সরকারের দাঁড়ানো উচিত।তাহলেই হয়তো এই অমানবিক ঘটনা থেকে মা-ছেলে মুক্তি পাবে।

দুর্গাপুর সার্কেলের এএসপি মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টা খুবই অমানবিক। আমরা সাধ্যমতো এই অসহায় মা-ছেলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। এই সমাজে বিত্তবানরা হয়তো ভাবছেন এটা তার বোঝা। যে বয়সে সে তার মায়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা সেই সময়ে মাকে তার দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে। সবাই এগিয়ে এলে মায়ের এই দুদর্শা থেকে লাঘব হবে।

দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, জাকির হোসেনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য কিছুটা সাহায্য করেছি। সে পৌরসভায় বাস করাতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা তার জন্য এবং তার মায়ের জন্য সরকারি সহযোগিতার চেষ্টা করব।

Bootstrap Image Preview