Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ রবিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

শুধুমাত্র ক্রিকেটে নয় ইংরেজিতেও প্রবল যুবা চ্যাম্পিয়নরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ১২:৩৫ PM
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ১২:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যাবে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইংরেজি ভীতি প্রবল। অবশ্য শুধু ক্রিকেটার নন জাতিগতভাবেই বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের এই আন্তর্জাতিক ভাষার চর্চা ও কথা বলার প্রতি প্রচন্ড জড়তা, অনভ্যস্ততা রয়েছে। যার বাইরে নন ক্রিকেটাররাও। ক্রিকেটের আড্ডায় প্রায়ই প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিদেশি কোচদের কথা কতটা আদৌ বুঝতে পারেন?

সত্যিই বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে যে, কোর্টনি ওয়ালশ কিংবা হালের ওটিস গিবসনদের কথা কতটা নিতে পারেন জাতীয় দলের পেস বোলাররা। কোচের কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারাও পেসারদের উন্নতি না হওয়ার বড় কারণ। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে হার্শেল গিবস তো সরাসরিই বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ইংরেজি বুঝতে পারেন না।

মজার বিষয়, সেই হার্শেল গিবসের স্বদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই কদিন আগে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। প্রথমবারের মতো দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব এনে দিয়েছে আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন যুব দল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আইসিসির কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ট্রফি প্রথমবার দেশকে এনে দেয়া দলটা ২২ গজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

মাঠের বাইরেও দক্ষতার নজির রেখেছে তারা। বিশেষ করে বিশ্বকাপে দলের খেলোয়াড়দের ইংরেজি ভাষায় কথা বলার প্রচেষ্টা নজর কেড়েছে সবার। কেউ অনর্গল বলেছেন, কেউ নিজের মতো করে ছোট ছোট বাক্যে কথা বলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা জড়তা চোখে পড়েনি তাদের মাঝে। অধিনায়ক আকবর ছাড়াও রাকিবুল, তানজিম হাসান সাকিবরা নিত্যই ইংরেজিতে কথা বলেছেন, মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন।

গত ৮ ফেব্রয়ারি আইসিসির ব্রডকাস্টারকে দেয়া প্রান্তিক নওরোজ নাবিলের ৮ মিনিট  ৫৫ সেকেন্ডের সাক্ষাতকারের ভিডিও তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। দেশ ব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। আইসিসির ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রায় দুই কোটি বার দেখা হয়েছে। অনর্গল বিশুদ্ধ উচ্চারণের সহিত কথা বলেছেন নাবিল। প্রশংসা কুড়িয়েছে তার পরিণত ভাবনা-কথাগুলো।

বিশ্ব জয়ী যুবাদেরকে শুধু ক্রিকেট নয়, সবদিক থেকে প্রস্তুত করেছে বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট বিভাগ। যার ফলটা বিশ্বকাপে দেখা গেছে। অতীতে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের মাঝে এমনটা খুব কমই দেখা গেছে। অধিনায়কের সঙ্গে ২-১ জন পারলেও দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ইংরেজিতে বলায় সলজ্জ থাকতেন। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়ন দলটার ক্রিকেটাররা সেখানে ব্যতিক্রম। অধিকাংশই জড়তা ছাড়া কথা বলেছেন ইংরেজিতে।

উল্লেখ্য করার মতো তথ্য হলো, বিশ্বকাপের এই আসরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছিল না কোনো অনুবাদক। আইসিসি দিতে চাইলেও অনুবাদক নেয়নি বাংলাদেশ।    

বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট বিভাগের ম্যানেজার আবু ইমাম মোহাম্মদ কাওসার জানালেন, ‘এবারও আইসিসি থেকে অনেকবারই বলছে যে, তোমাদের কি ট্রান্সলেটর বা অনুবাদক লাগবে? ছেলেদের কথা বলার জন্য। আমরা বলেছি, না লাগবে না। ওরা যেটুকু পারবে সেটুকুই বলবে।’

আকবর-শরীফুলদের গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়েছে সব দিক থেকে। বিসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দলটাকে আমরা অনেক কাজ করেছি। শুধু তাদের খেলা নয়, তাদের চাল-চলন, মানসিকতা, জীবন, ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আমরা ছোট ছোট কাজ করেছি। ওদেরকে আমরা কিছু ক্লাসও করিয়েছি ইংরেজির উপর। আমার মনে হয়, ক্লাসের চেয়ে বেশি কাজ করেছে যেটা, অনেক আমরা ওদেরকে কিছু গ্রুপ ভিত্তিক কাজ দিতাম, কিছু সময় ওদেরকে ইংরেজিতে কথা বলতে দিতাম। তারপর ওদের নিজেদের মাঝেও কথা বলতে দিতাম। প্রেজেন্টেশন করার জন্য পাঠিয়ে দিতাম।’

ইংরেজির চর্চাটা যেন দলের মধ্যে সবসময় থাকে সেটি নিশ্চিত করেছিল গেম ডেভলপমেন্ট বিভাগ। যুবাদের ইংরেজির দক্ষতা বাড়াতে কিছু ক্লাস নিয়েছিল বিসিবির পার্টনার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি। আবু ইমাম মোহাম্মদ কাওসার বলেছেন, ‘কিছু ক্লাস হয়েছে এআইইউবির সহযোগিতায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ওরা নিজেদের আগ্রহে কথা বলেছে। ওরা ছোট ছোট বাক্য বলতে পারে, আবার অনেকে অনর্গল কথা বলতে পারে। সবমিলিয়ে ওদের এই দিকটাও ভালো উন্নতি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওরা (এআইইউবি) আমাদের এখানে ৭-৮টা ক্লাস নিয়েছে। ওখানে কিছু কাজ হয়েছে। ওরা হয়তো বুঝতে পেরেছে কিভাবে কথা বলা উচিত। কারণ ৭-৮টা ক্লাস দিয়ে তো হয় না। মূলত ওরা বিভিন্ন সময় নিজের অনুশীলন করেছে, নিজেদের মধ্যে কথা বলেছে, আমাদের দুজন বিদেশি কোচ আছে, তাদের সাথে কথা বলতো। আবার টিম মিটিংয়ে যখন বসতাম, চেষ্টা করতাম ওরা যাতে কিছু কথা ইংরেজিতে বলে। কথা বলতে উৎসাহ দিতাম ওদেরকে, সুযোগ দেয়া হতো।

অনেক সময় দেখা যায়, কোচরা কথা বলে, ছেলেরা কথা বলে না। আমরা চেষ্টা করে যাতে আমাদের ছেলেরাও কথা বলে। খেলা সম্পর্কে ওদের চিন্তা কি, তাদের প্ল্যান কি, শুধু অধিনায়ক না, প্রত্যেক প্লেয়ারই যাতে নিজের কথা বলে। কথা বলার অভ্যাসটা আমরা করিয়েছি।  

Bootstrap Image Preview