নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় অভিযুক্ত এমভি এসকেএল-৩ নামের কার্গো জাহাজটি জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদী থেকে জাহাজটি জব্দ করা হয়। দুর্ঘটনার পর বদলে ফেলা হয় কার্গোর রং। কার্গোটিকে জব্দ করা কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য জানিয়েছে।
গত রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ সাবিত আল হাসান। দুর্ঘটনার পর ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের উদ্ধার না করে পালিয়ে যায় কার্গো জাহাজটি।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ধাক্কা দেওয়া অজ্ঞাত কার্গো জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় মামলা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে মামলায় কার্গো জাহাজ কিংবা এর চালক ও মালিক কারোরই নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় কার্গো জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ কার্গো জাহাজটি জব্দসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনবে।
এজাহারে কেন সেই কার্গো জাহাজের নাম নেই জানতে চাইলে মামলার বাদী বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা বাবুলাল বৈদ্য বলেন, ভিডিও ফুটেজে কোথাও ওই জাহাজের নাম দেখা যায়নি। নিশ্চিত না হওয়ায় অজ্ঞাত কার্গো জাহাজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত কার্গো জাহাজের নাম বেরিয়ে আসবে।
তবে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ, লঞ্চ মালিক সমিতি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধাক্কা দেওয়া কার্গোটির নাম এমভি এসকেএল-৩, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর এম-০১-২৬৪৩। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাজটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে লজিস্টিকস।
আর ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকপক্ষ বলছে, কার্গো জাহাজটির মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদেরও মামলা করতে দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার সারাদিন থানায় থানায় ঘুরেও মামলা করতে পারেনি ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমএল সাবিত আল হাসানের মালিক পক্ষ। বুধবার নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা ও বন্দর থানায় জাহাজের মাস্টার বাদী হয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। লঞ্চ ডুবির সময় সাবিত আল হাসানের দায়িত্বে ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার জাকির হোসেন। লঞ্চডুবিতে আহত জাকির চিকিৎসা নিয়ে বুধবার মামলা করতে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, লঞ্চের মালিক পক্ষ মঙ্গলবার মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে বুধবার তিনি মামলা করতে গিয়েছিলেন। সকালে বন্দর থানায় গেলে তাঁদেরকে থানার বাইরে কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রেখে মামলা না নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানায় চলে যেতে বলেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দুপুরের পর নারায়ণগঞ্জ নৌ থানায় গেলে সেখান থেকেও মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাদের। এসময় জাকির হোসেনের সঙ্গে ওই লঞ্চের কেরানি মঞ্জুর আলী ও লঞ্চ মালিক সমিতির লোকজনও ছিলেন।
মামলা না নেয়ার কারন সম্পর্কে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর মামলাটির তদন্ত করবে নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা। জাহাজের মাস্টারকে আমরা নৌ থানায় পাঠিয়েছি। নৌ থানা চাইলে মামলা নিতে কোন বাধা নেই।’
লঞ্চটির কেরানি মঞ্জুর আলী বলেন, ‘নৌ থানার ওসিরে আমরা অনুরোধ করছিলাম তিনি যেন আমাগো মামলটা নেন। তিনি তখন বললেন, একই ঘটনায় দুইটা মামলা করার নিয়ম নাই। আমরা কতোক্ষণ থানায় বইসা থাইকা চলে আসছি।’
এর আগে মঙ্গলবার ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিক আলাল হোসেন বলেছিলেন, মঙ্গলবার দিনভর তিনিসহ লঞ্চ মালিক সমিতির লোকজন নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর ও নৌ থানায় ঘুরেছেন। কিন্তু কোনো থানাই এ ঘটনায় মামলা নিতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, ‘নৌ থানায় মামলা তো নিলই না উল্টো হুমকি দিল এক এসআই। বলল, আমারেই আটক করবে।’
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে সাংসদ শেখ তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী শেখ শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি স্যারের (সাংসদের) রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখি। আপনারা স্যারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।’
ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং ঢাকা সদরঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৮ মার্চ এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজটিকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। তবে কার্গো জাহাজটিকে নৌপথের চলাচলের জন্য সার্ভে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কথা ছিল, সার্ভে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি ডকইয়ার্ডেই থাকবে। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় জাহাজটি।