Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ সোমবার, জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের ‘অংকের যাদুকরে’র দিন কাটে রাস্তায় রাস্তায় !

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৩৩ PM
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৩৩ PM

bdmorning Image Preview


জন্মেছিলেন অভিজাত পরিবারে। কৈশোর ও যৌবনে ছিলেন দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্র। কর্মজীবনে পেয়েছিলেন ‘অংকের যাদুকর’ খেতাব। কঠিন ও জটিল অংকের সহজ সমাধান দিতেন তিনি। ঢাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেছেন সুনামের সাথে। নিজ এলাকায় গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের পন্ডিত শিক্ষক হিসেবে সমধিক পরিচিতি ছিল তার। বীজগণিতের উৎপাদক বিশ্লেষণের ফর্মুলা আবিষ্কার করে হৈ চৈ ফেলে দেয়া সেই আব্দুল গাফফারের এখন দিন কাটে রাস্তায় রাস্তায়।

বয়স সত্তরের কাছাকাছি।গায়ে দুর্গন্ধময় ময়লা কাপড়। মাথা ভর্তি এলোমেলো চুল। আপন মনে হেঁটে চলেন পথে পথে। এমন একজন মেধাবী শিক্ষকের করুণ পরিণতি ও জীর্ণদশা দেখে পরিচিতজনরা হতবাক হলেও তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব কেউ নেন না। অথচ তার নিপুণ মেধায় গড়া কত ছাত্র আজ প্রশাসনের উচ্চ পদে কর্মরত আছেন। ময়লাযুক্ত ছেঁড়া জামা কাপড় ও পাগলবেশি আব্দুল গাফ্ফার কোনদিন খেয়ে আবার কোনদিন না খেয়ে বছরের পর বছর ঘুরছেন। মসজিদ, স্কুলঘর, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বারান্দা এখন এই জনপ্রিয় শিক্ষকের বসবাসের জায়গা।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষক আব্দুল গাফ্ফার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের কাজী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। এলাকায় তাদের পরিবার অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত। আব্দুল গাফ্ফারের মেজ ভাই কাজী আব্দুল গনি নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর নিয়েছেন। ছোট ভাই কাজী আব্দুল কাদের ঢাকায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। তবে তাদের কোন ভাইয়ের সংসার জীবন বা সন্তানাদি নেই।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১০ বছর বয়সে পিতৃহারা হন আব্দুল গাফ্ফার। পিতৃহীন তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে হতাশায় পড়েন সদ্য বিধবা মা কাজী বদরুন্নেছা। তাই সন্তানদের নিয়ে বদরুন্নেছা চলে আসেন মহেশপুর পৌর এলাকার জলিলপুর মোল্লা পাড়ার পিতার বাড়িতে। নানা নুরুদ্দীন আহম্মেদের বাড়িতে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন আব্দুল গাফ্ফার। বেড়ে ওঠেন তুখোড় মেধাবী ছাত্র হিসেবে। এলাকায় তার মেধার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে।

মা বদরুন্নেছার দ্বিতীয় বিয়ে হয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি ও তৃতীয় বিয়ে হয় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ছাউলিয়া গ্রামে। মা বদরুন্নেছার সন্তানদের অনেকেই এখনো মহেশপুরের জলিলপুরের নানা বাড়িতে বসবাস করেন। এদিকে আব্দুল গাফ্ফার জগন্নাথ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসি ও এমএসসি পাশ করে ঢাকার মানিকনগর ও পরে মতিঝিল মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিয়ে করেন নড়াইলে। তার স্ত্রীও ছিলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আর সংসার করা হয়নি। ৩০ বছর ঢাকায় বসবাসের পর তিনি মহেশপুর চলে আসেন। গাফ্ফারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী (মায়ের তৃতীয় পক্ষ) ছিরবা আক্তার ঝর্ণার ভাষ্যমতে তার শাশুড়ি বদরুন্নেছা বেঁচে থাকাবস্থায় মাঝেমধ্যে আব্দুল গাফ্ফার বাড়িতে আসতেন।

২০০৬ সালে ২৭ মার্চ শাশুড়ি মারা গেলে আর আসেন না। এখন মসজিদ ও পথে পথে ঘুরে বেড়ান। ঝর্ণা উল্লেখ করেন তার ভাসুরকে এভাবে জীর্ণ আর বিবর্ণ চেহারায় ঘুরতে দেখে তার ছেলে ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার কাজী আরাফাত হোসেন নিজ বাড়িতে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি আসেননি।

ছিরবা আক্তার ঝর্ণা বলেন, পিতৃকুল ও মাতৃকুল মিলে আব্দুল গাফ্ফার ও তার তিন ভাই ৪২ বিঘা জমি পান। এর মধ্যে খামারাইল রামনগর গ্রামে ১২ বিঘা জমি এখনো আছে। আর জলিলপুরে ছিল ৩০ বিঘা। এসব জমি তার স্বামী কাজী আব্দুল বারী দেখাশোনা করতেন। ২০১৪ সাল থেকে তারা জমি বিক্রি শুরু করলে আব্দুল বারী জমি দেখাশোনা বন্ধ করে দেন।

Bootstrap Image Preview