Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ রবিবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

'করোনা বীর' খোরশেদকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ের চেষ্টা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:২২ AM
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:২২ AM

bdmorning Image Preview


করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকার করে দেশে-বিদেশে আলোচিত নারায়ণগঞ্জের কাকাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ফেসবুক লাইভে এসে এক নারীর বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ তুলেছেন । তার দাবি, ব্যাকমেইল করে তাকে বিয়ের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি তার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে একজন নারীর পক্ষ থেকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে এসে খোরশেদ অভিযোগ করেন, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে ওই নারী হয়রানিও করছেন।

লাইভে খোরশেদের সাথে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনাও উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুক লাইভে জানানো হয়, সাইদা শিউলি নামে ওই নারী ভয়ঙ্কর চরিত্রের অধিকারী।

তার সঙ্গে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের চলাফেরা। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং তিনবার বিয়ে করেছেন। ওই নারীর দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন এবং এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে খোরশেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি করোনার শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিয়েছি ও সম্মুখে থেকে লডাই করে দাফন সৎকার কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এক পর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে এক পর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। এ সময় বাংলানিউজের একটি সংবাদের নিচে ওই মহিলা কমেন্ট করে জানান যে তিনি অক্সিজেন দিতে চান এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধু তালিকায় যুক্ত হন এবং কথা বলা শুরু করেন।

এক পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন। আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এরকম কিছু সম্ভব নয়। কাজ হবেনা বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগেন।

খোরশেদ আরও বলেন, সম্মানকে ভয় পাই বলেই এতদিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য্য ধরেছি কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি।

আমার পাশে থাকার জন্য আমি আমি সাংবাদিক, আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও প্রতিপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, ২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন এবং হত্যার হুমকি জানাচ্ছেন ওই মহিলা। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানষিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী ও সন্তান নকিবকে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেন। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং অবহিত করেছি। বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পর পরই তাদের অবহিত করা হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে খোরশেদ বলেন, আমার বাড়ি একটি মরা বাড়ি হয়ে গেছে। একের পর এক লাশ দাফন করি। আবার আমার বাচ্চাদের থেকে এসব কারণে লুকিয়ে থাকতে হয়। ওদের জীবনের ভয়ে আছি আমি। আমার ছেলে মেয়ে আমার চিন্তায়, পারিবারিক অশান্তিতে অসুস্থ হয়ে গেছে। এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই ঘটনার কারণ কি? আমি এসব থেকে মুক্তি চাই আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে।

খোরশেদ বলেন, বিভিন্ন মানুষকে ব্যবহার করে তিনি আমাদের জ্বালাতন করতেন। এতদিন কষ্ট সহ্য করেছি, আর পারছিনা। অনেকে লজ্জায় আমার কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। আপনাদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিক ভাইরা লেখনি ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আমাকে এ অবস্থা থেকে বাঁচান। আমি এ নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই। আমি আমার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চাই এসব ঘটনায়।

খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের সচিবকে ফোন দিয়ে বলেছেন আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করবে। আমার সাথে তার সব কথার রেকর্ড আছে। সাংবাদিকসহ যে কেউ চাইলে আমরা এসব রেকর্ডিং দেব। আমি আমার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই রাষ্ট্রের কাছে।

উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের পর গত বছর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের মরদেহ দাফন বা সৎকার নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল। ভয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনেকেই করোনায় মৃতদের মরদেহ দাফনে এগিয়ে আসেননি।

এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরদেহ দাফন বা সৎকারে এগিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। সহযোগীদের নিয়ে গঠন করেন ‘টিম খোরশেদ’।

দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে প্রশংসিত ও আলোচিত খোরশেদ পান ‘করোনা বীর’ উপাধিও।এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একপর্যায়ে সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হন কাউন্সিলর খোরশেদ। তবে সুস্থ হয়ে আবারও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মরদেহ দাফন ও সৎকারের কাজে নামেন খোরশেদ।

Bootstrap Image Preview