Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ রবিবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঢাকায় আসছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী; ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৫ AM
আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি একদিনের সফরে আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। সফরে এসে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং বৈঠক করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফর বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। কেননা, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ভারত থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ। আর চীনও বাংলাদেশকে টিকা দিতে প্রস্তুত।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার চাইলে যেকোনো মুহূর্তে চীন টিকা পাঠিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে শুরুতে ৫ থেকে ৬ লাখের মতো ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেবে চীন।

চলমান পরিস্থিতির কারণে ভ্যাকসিন ইস্যু ছাড়াও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্রের বড় উৎস চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের উদ্যোগের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) থেকে বাংলাদেশ যেন বিমুখ না হয় সেদিকেও নজর থাকবে ওয়েই ফেঙ্গির।

গত বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে এক দিনের সফরে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় সফর বাতিল করেন ওয়েই ফেঙ্গি।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা মহামারি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কয়েক দিন ধরে দেশটিতে মৃত্যু ও আক্রান্তের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনের কারণে ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই অবস্থায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ঢুকলে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অবশ্যই থাকে। আমরা বর্ডারে কড়াকড়ি করতে বলছি। আসা-যাওয়া সীমিত করতে হবে। এর মানে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভ্রমণ করবেন না। কোনোরকম পর্যটন, বিনোদন বা সাধারণ কারণে যাতায়াত বন্ধ করা যেতে পারে।’

এই বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি, সীমিত করতে না পারি এবং কোয়ারেন্টাইন করতে না পারি তাহলে এটা তো ছড়িয়ে পড়বেই।’

তিনি জানান, বিষয়টি সরকারকে জানানো হবে। সদস্যদের মিটিংয়ে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করা হবে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদও এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আগের তুলনায় করোনাভাইরাসের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ছড়ানোর মাত্রা বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডাবল ভ্যারিয়েন্টে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।’

উপাচার্য বলেন, ‘ভারতের এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে, ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। যদি ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই ভারতের ডাবল ভ্যারিয়েন্ট যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’

করোনা মহামারি রুখতে প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও। শনিবার তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বৈঠকে আমরা বলেছিলাম, ভারতে কোভিডের প্রকোপ অনেক বেড়েছে। কয়েকদিন আগে ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করা ১৯ জন বাংলাদেশির একটি দলের মধ্যে ১৭ জনই কোভিডে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এরা সবাই চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তারা পজিটিভ হয়ে আসছেন। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, এই মুহূর্তে আমরা কোনো লোককে ভারত থেকে আসতে দেব না। সীমান্ত বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। যেভাবে ভারত আমাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত অনেকে তখন বলল, ভারতীয়দের আসতে নিষেধ করা সম্ভব কিন্তু বাংলাদেশিদের কীভাবে আসতে নিষেধ করা হবে?’

মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের তরফ থেকে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা করলেও তাদের সমস্যা হবে না।’

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। মাঝে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সম্প্রতি শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। এপ্রিলে মৃত্যু ও সংক্রমণ একাধারে বেড়ে গত কয়েক দিন ধরে তা কিছুটা কমছে। এই অবস্থায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে এলে আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যেকোনো মূল্যে তা ঠেকানোর উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Bootstrap Image Preview