Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শনিবার, মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুনিয়ার হাতে লেখা ডায়েরি মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০৬ PM
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০৬ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ সংগৃহীত


অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) ঝুলন্ত লাখ, মোবাইলসহ তার নিজ হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ডায়েরির বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এই ছয় ডায়েরি। ডায়েরির সূত্র ধরে পুলিশ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটিকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বুধবার (২৮ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মোসারাতের বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। এই মামলার একমাত্র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।

পুলিশ উপকমিশনার বলেন, মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হবে ডায়েরিগুলো। গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে।

ঘটনার শিকার নারীকে হতাশা গ্রাস করেছিল, তিনি মারাত্মক মনঃকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাঁকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরি হবে। ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী পুলিশ প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য গ্রহণ করবে।

এই মুহূর্তে পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ ও ‘অভিপ্রায়’ এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরি। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ঘটনাটিকে এক সুতোয় গাঁথতে, অর্থাৎ কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছে, তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন ও পারিপার্শ্বিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সংগ্রহ করেছে। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যু কী কারণে, সেটি জানা সবচেয়ে জরুরি।

ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেছে। তা ছাড়া ডিএনএ প্রোফাইল করাসহ আর যা যা করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পুলিশ অনুরোধ করেছে। সাক্ষ্য, বস্তুগত প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে মামলাটিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পুলিশ নিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করে। সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে সাক্ষ্যপ্রমাণ আগে সংগ্রহের কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ উপকমিশনার বলেন, প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী যেকোনো মামলায় আসামি ধরায় কোনো বাধা নেই। আত্মহত্যার অভিপ্রায় এবং প্ররোচনাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মামলার অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করা ও একসঙ্গে নিয়ে আসা জরুরি। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আগে পুলিশ এই কাজগুলো আগে করতে চায়।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, যেহেতু মামলাটি বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা, ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং মূলত আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই কাজ করব।

পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে সন্দেহজনক কোনো যাতায়াতের তথ্য পায়নি। তরুণী যেদিন আত্মহত্যা করেছেন, সেদিন বা তার আগের দিন সায়েম সোবহান আনভীর ওই বাসায় যাননি। তবে এর আগে পরপর দুই দিন তিনি ওই বাসায় যান এবং এ-সম্পর্কিত ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে বলে জানান তিনি।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরও জানিয়েছেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা, মোসারাত আত্মহত্যা করেছেন। শরীরের অন্য কোথাও জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঝুলে থাকায় হাত-পা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা ফুলে ছিল।

ফ্ল্যাটে মোসারাতের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। ফোনগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে।

Bootstrap Image Preview