স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যায় বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন আসামিদের। আদালতে দেওয়া দুই সাক্ষীর জবানবন্দি ও পিবিআই এর তদন্তে এই তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া পিবিআই এর দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও নতুন করা মামলায় লেনদেনের উল্লেখ আছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমাবলেন, স্ত্রী হত্যার তিন দিন পর বাবুল আক্তার তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হককে বলেন তাঁর লাভের অংশ থেকে তাঁকে যেন টাকা তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে ওই টাকা গাজী আল মামুনকে পাঠান। গাজী আল মামুন ওই টাকা মুসা, ওয়াসিমসহ আসামিদের ভাগ করে দেন। তবে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, মিতু হত্যার মামলার ভিডিও ফুটেজে বাবুল আক্তারের সোর্স এহতেশামুল হক ভোলা, কামরুল শিকদার ওরফে মূছা ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরপর তিনি দাবি করেছিলেন, জঙ্গিরা জড়িত। তাঁর সোর্সকে তিনি চিনলেও বিষয়টি চেপে যান। ভুলেও তিনি সাইফুল হকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া মুসা ও ওয়াসিমসহ আসামিদের তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেননি।
এ দিকে গত মঙ্গলবার বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ও মামুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দীনের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। সেখানে দুজনই বাবুলের নির্দেশে স্ত্রী হত্যায় জড়িতদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এদিকে বাবুলকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এতে বাবুল ছাড়াও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন।
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে নিজ বাসার কাছে খুন হয়েছিলেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়েছে পিবিআই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার থেকে বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের পিবিআইয়ে হেফাজতে আছেন। তবে পিবিআই বাবুল আক্তারকে আটক বা গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি। তারা বলছে, বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রামে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
মাহমুদা হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদী স্বামী বাবুল আক্তার। কিন্তু পরবর্তীকালে বাবুল আক্তারকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে তদন্ত আর এগোয়নি। একপর্যায়ে বাবুলকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে।
ওই ঘটনায় বাদী হয়ে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তাতে তিনি বলেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মাহমুদা হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মাহমুদার মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন।
পিবিআই আজ জানায় মিত্যু হত্যায় বাবুল জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরই আগের মামলার চার্জশিট ও নতুন করে মামলা দায়ের হলো।