জামিনের শর্ত অনুযায়ী প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তর করেছেন তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু।
ঢাকার মুখ্য মহানগর- সিএমএম আদালতের হাকিম মো. বাকি বিল্লাহ আদালতে রোববার রোজিনার পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিনের আদেশ দেন।
রোজিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতের আদেশে রোজিনার পাসপোর্ট ও জামিননামা প্রস্তুত করে জমা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামিননামা প্রস্তত হয়েছে, আমরা জমা দিয়েছি, এরপর সেটা আদালত সংশ্লিষ্ট শাখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার পর তা কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে রোজিনা ইসলাম মুক্তি পাবেন।’
ভার্চুয়াল আদালতে রোজিনার জামিন আদেশের পর এক ব্রিফিংয়ে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জানান, জামিননামা আদালতে জমার পর সেটি কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হবে। সেখানে কিছু আইনি প্রক্রিয়ার পর, যদি কোনো জটিলতা না হয় তাহলে আজ সন্ধ্যার আগেই কাশিমপুর কারাগার থেকে রোজিনা ইসলাম মুক্ত হতে পারবেন।
পাসপোর্ট ও জামিননামা আদালতে জমা দেয়ার পর রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, তার স্ত্রীর জামিনের জন্য দেশ-বিদেশে যারা আন্দোলন করেছেন, সাংবাদিক এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী নানান রোগে আক্রান্ত, সে খুবই অসুস্থ। আজকে রাতের মধ্যে জেল থেকে বের হতে না পারলে আজকে রাতেই মারা যেতে পারে। তাই তাকে দ্রুত মুক্তি দেয়া হোক।’
রোজিনা ইসলাম ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি সরিয়েছেন; কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত।
অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এর খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রণয়নকাজ চলছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত।
১৮ মে রোজিনাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় রোজিনাকে পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডে পেতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক মোহাম্মদ জসীম।
জামিন আবেদন করেছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। এই আবেদন আংশিক শুনানি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ মে দিন রাখেন বিচারক। রোজিনাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে।
২০ মে ভার্চুয়াল শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ জসিম রোববার জামিন শুনানির জন্য নতুন তারিখ রাখেন এবং রাষ্ট্রপক্ষকে নথি উপস্থাপন করতে বলেন।
রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে দণ্ডবিধির অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এর ৩ ও ৫ ধারায়। সেখানে তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুরু থেকেই রোজিনাকে মুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সাংবাদিক নেতারা রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাইছিলেন