সিলেটে ‘টিকটক’ ফান্নি ও ‘লাইকী’ লিজার ফাঁদে পড়ে ধর্ষিত হয়েছে এক তরুণী। টিকটক ও লাইকী’র শ্যুটিংয়ের কথা বলে বিশ্বনাথ থেকে সিলেটের লামাপাড়ার বাসায় এনে ওই তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ করেছে টিকটক ফান্নি। এতে সহযোগিতা করেছে তার সহযোগী লাইকী লিজা। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে টিকটক ফান্নি ও লিজা।
গোলাপগঞ্জ থানার বাণীগাজী গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মো. জুবের আহমদ। বর্তমানে তারা শিবগঞ্জ লামাপাড়া মোহিনী ৮৩-এ বাসার বাসিন্দা। সে নগরীর টিলাগড় এলাকায় টিকটক ফান্নি নামে পরিচিত।তার সহযোগী টিলাগড়ের ‘লাইকী’ লিজা। তারা দু’জন এক সঙ্গে জুটি বেঁধে টিকটক ও লাইকী তৈরি করে ভার্চ্যুয়াল জগতে পরিচিতি পেয়েছে।
সম্প্রতি টিকটক ও লাইকীর ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে জগন্নাথপুরের মিরপুর এলাকার কামাল হোসেন নামের এক দরিদ্র রিকশা চালকের ষোড়শী মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় ফান্নি ও লিজার। ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমেই ওই তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা। গত ঈদের পরবর্তী সময়ে জাফলংয়ে টিকটক ও লাইকীতে শুটিংয়ের জন্য লিজা ওই তরুণীকে প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি তরুণী তার বাবা কামাল হোসেনকে জানান। এ নিয়ে কামাল হোসেন লাইকী লিজার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে তিনি তার মেয়েকে টিকটক ও লাইকীতে অভিনয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।
গত ১৯শে মে বিশ্বনাথের আত্মীয়ের বাসায় ছিল ওই তরুণী। ওখান থেকে ফান্নি ও লিজা সিএনজি অটোরিকশাযোগে তাকে শহরে নিয়ে আসে। এরপর লামাপাড়াস্থ ফান্নির বাসায় তাকে রাখা হয়। সেখানে লিজা ওই তরুণীকে রেখে পোশাক পরিবর্তন করার কথা বলে চলে যায়। এরপর ফান্নি ওই তরুণীকে নাস্তা ও কোল্ড ড্রিংকস খেতে দেয়। তরুণী ফান্নির দেয়া নাস্তা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি বুঝতে পেরে সে বান্ধবী লিজা ও তার বাবাকে ফোন দেয়ার চেষ্টা করলে টিকটক ফান্নি তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে টিকটক ফান্নি ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং সারারাত তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরের দিন সকালে ধর্ষক ফান্নি ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ না করতে তরুণীকে হুমকি দেয়। এদিকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের পর অসুস্থ হয়ে পড়া ওই তরুণীকে নিয়ে নগরীর একটি হোটেলে নাস্তা করে টিকটক ফান্নি। পরে দুপুরের দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বিশ্বনাথে গিয়ে তরুণীকে তার আত্মীয়ের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে।
বিশ্বনাথের স্বজনরা তরুণীর শারীরিক অবস্থা দেখে তার পিতা কামাল আহমদকে বিষয়টি জানান। এ সময় তরুণীও রাতভর তার উপর চলা নির্যাতনের কথা স্বজনদের জানায়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই তরুণীকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আসক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা ও সহায়তায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ওই তরুণী সুস্থ হয়। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার তার পিতা কামাল আহমদ শাহপরান থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেন। রাতে পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহপরান থানার এসআই অঞ্জন সিংহ জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই তরুণী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি ছিলেন। তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওসিসিতে পরীক্ষায় তাকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। এ কারণে পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের আচরণে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর পিতা কামাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি ফেরার পর তার মেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলো। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সুস্থ হয়ে উঠেছে। টিকটক ফান্নির নির্মমতায় তার মেয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি বলে জানান তিনি। দাবি করেন- টিকটক ফান্নি ও লিজা ফাঁদে ফেলেই তার মেয়েকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে।