পুল পার্টির নামে রিসোর্টগুলোর অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা। এসব পার্টির আয়োজকসহ পাঁচ শতাধিক বখাটে টিকটকারের একটি তালিকা ধরে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
কারা, কীভাবে এসব পার্টির আয়োজন করে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভারতে পাচারের শিকার এক নারীকে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় অনুসন্ধান শুরুর পর পুল পার্টির বিষয়টি সামনে আসে।
টিকটকের ফাঁদে ফেলে নারীদের ভারতে পাচার করা হচ্ছে। পুল পার্টির নামে নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে প্রথমে টিকটক মডেল বানানোর প্রলোভন ও উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাচার করা হচ্ছে। এসব পুল পার্টির আয়োজন করছে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
ঢাকার আশপাশের রিসোর্টগুলোতে পুল পার্টির নামে চলে উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা। এদের বেশিরভাগই আবার পূর্ব পরিচিত নন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুল পার্টির টিকিট কেটে তারা এসব পার্টিতে যোগ দেয়। উঠতি বয়সিদের আকৃষ্ট করতে টিকিট বিক্রিতে ব্যবহার করা হয় নারীদের।
সেখানে সুইমিংপুলে গানের তালে তালে অশ্লীল নাচানাচি করে। উচ্ছলতার নামে চলে উচ্ছৃঙ্খলতা। অবাধেই চলে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু নারীদের ফাঁদে ফেলতে পুল পার্টিতে নিয়ে যেত। টিকটক মডেল বানানোর প্রলোভন দেখাত। তারপর কৌশলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে ভারতে পাচার করত। এভাবে হৃদয় বাবুর সিন্ডিকেট প্রায় দেড় হাজার নারীকে ভারতে পাচার করেছে। ভারতে পাচারের শিকার এক ভুক্তভোগী তরুণী কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে টিকটক পার্টি করে হৃদয়। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার লালন শাহর মাজারে টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয় হৃদয়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন রিসোর্টে পুল পার্টির আয়োজন করে নারীদের ফাঁদে ফেলত।
তাদের টিকটক মডেল বানানো ও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করত। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্প্রতি এক তরুণীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা টিকটক হৃদয়কে শনাক্ত করে।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা বেঙ্গালুরুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ ঘটনায় বেঙ্গালুরু পুলিশ টিকটক হৃদয় বাবুসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২৭ মে নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জে টিকটক হৃদয় গ্রুপের সদস্য স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার : সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, টিকটক হৃদয় গ্রুপের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। তারা স্বামী-স্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সেন্টমার্টিন পরিবহণের কাউন্টারের সমনে থেকে শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব।
শনিবার সন্ধ্যায় র্যাব-১১ এর এএসপি সম্রাট তালুকদারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতাররা হলো রুবেল সরকার ওরফে রাহুল (৩২) ও তার স্ত্রী সোনিয়া (২৫)।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার দম্পতি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তারা ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সি তরুণীদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে পাচার করে।