হঠাৎ করেই মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের ঘাট এলাকার পাশে গড়ে উঠেছে একটি রেস্টুরেন্ট ‘প্রজেক্ট হিলশা’। দেশের সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্ট হিসেবে দাবি করে প্রজেক্ট হিলশা জানায়, তাদের মনোরম পরিবেশ দর্শনার্থী ও পর্যটকদের মানসম্মত ইলিশ খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অবশ্য প্রজেক্ট হিলশা নিয়ে নানা জন যেমন আলোচনা করছেন, তেমনি করছেন সমালোচনাও। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।
ইলিশ মাছের কাঠামোতে তৈরি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটির ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। খাবারের দাম বেশি এমন দাবি করে ক্রেতারা সমালোচনা করলে সেগুলোও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
এরই মধ্যে দেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা শেয়ার করতে শুরু করেছেন আরেকটি মাছের আকৃতির ভবনের ছবি। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটির নাম ‘প্রজেক্ট তেলাপিয়া’। এমনকি সেখানে খাবারের দামও প্রজেক্ট হিলশা রেস্টুরেন্টের চেয়ে কম। অনেকে ছবিটি শেয়ার করলেও আসলে বাংলাদেশে কোথায় সে ভবন কিংবা ‘প্রজেক্ট তেলাপিয়া’ রেস্টুরেন্ট সেটি কেউই স্পষ্ট করে বলেননি।
‘প্রজেক্ট তেলাপিয়া’ নামের এই ভাইরাল ছবি খুঁজে দেখা গেছে, ‘প্রজেক্ট তেলাপিয়া’ দাবি করে শেয়ার করা ছবিটি বাংলাদেশের কোনো স্থানেরই নয়; এমন কি সেটি কোনো রেস্টুরেন্টেরও নয়।
মাছ আকৃতির ভবনটি আসলে ভারতের জাতীয় মৎস উন্নয়ন বোর্ডের (এনএফডিএ) হায়দ্রাবাদে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়।
সংস্থাটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গেছে, দেশটির মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান জাতীয় মৎস উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে ২০০৬ সালে।
দেশটিতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ও বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে পুরো ভারতজুড়ে কাজ করে সংস্থাটি।
দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদ শহরে ২০০৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীণ মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ্রী শারদ পাওয়ার মৎস উন্নয়ন বোর্ডটির ঘোষণা দেন।
তখন থেকে বোর্ডটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে হায়দ্রাবাদ শহরের আমিরপিটের মৈত্রী বিহার কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে।
বিখ্যাত মার্কিন স্থাপত্যবিদ আলবার্ট কাহন ১৯২৮ সালে ডিজাইন করেছিলেন ফিশারিজ বিল্ডিং নামের ৩০ তলা একটি ভবন; যেটি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত।
যদিও স্থাপত্য নকশায় ফিশারিজ বিল্ডিংয়ের আদল নেই সে ভবনের। কিন্তু সেই ফিশারিজ বিল্ডিং নাম থেকেই ভারত সরকার তাদের মৎস উন্নয়ন বোর্ডের ভবন তৈরির অনুপ্রেরণা পায় বলে জানা গেছে। এর পরই ফিশারিজ ভবন নির্মাণের শুরু।
মন্ত্রণালয় এরপর হায়দ্রাবাদ শহরের পিভিএনআর এক্সপ্রেসওয়ের ২৩৫ নম্বর পিলারের কাছে নির্মাণ করে একটি মাছের আকৃতির ভবন।
২০১২ সালের এপ্রিলে সেই মাছ আকৃতির ভবনে অফিস শুরু করে ভারতীয় মৎস উন্নয় বোর্ড।
১০তলা ভবনটি মাটির সঙ্গে সংযুক্ত শুধু কিছু পিলার দিয়ে, সামনে আছে সিঁড়ি। এ ছাড়া দুটি টানেলে নিচ থেকে ভবনে ওঠার জন্য রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা আছে।
দৃষ্টিনন্দন হলেও ভবনটিতে দাপ্তরিক কাজ ছাড়া কোনো দর্শনার্থীর প্রবেশ করতে পারেন না। এমনকি ভবনটির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও দাঁড়াতে দেয়া হয় না কোনো গাড়ি।