নিখোঁজের ছয় দিন পরেও ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের কোনো হদিস বা সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রংপুর জেলা পুলিশ বলছে, তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আবু ত্ব-হা ঠিক কোথায় থেকে নিখোঁজ হয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ।
রংপুর থেকে ফেরার পথে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী ও মা রংপুর ও ঢাকায় এ বিষয়ে পুলিশকে লিখিত অভিযোগ করেন।
স্বামীর খোঁজে স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র্যাব সদর দপ্তর সব জায়গাতেই ঘুরেছেন বলে জানিয়েছেন আদনানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার৷ কোথাও তিনি আশা পেয়েছেন, কোথাও পাত্তাই পাননি৷
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাবিকুন্নাহার যে চিঠিটি জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, গত ৮ জুন রংপুর থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ ৩৩-৪৩৪২) ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আদনান ৷ তার সঙ্গে ছিলেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন ফয়েজ৷ গাড়িটিসহ চারজনেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ সাবিকুন্নাহার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বলছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, কেউ বলছেন তাকে পাওয়া গেছে ৷ এসব নানা গুজবের মধ্যে তিনি স্বামীকে ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
আদনানের পারিবারিক বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায় ৷ তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন ৷ আদনানের মা আজেদা বেগম শুক্রবার (১১ জুন) বিকালে ছেলের সন্ধান চেয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছেন ৷
সাবিকুন্নাহার জানান, রংপুরের বাড়ি থেকে বগুড়ায় একটি ধর্মীয় সভায় যোগ দিতে বিকেল ৪টার দিকে একটা কারে করে বের হন আদনান৷ গাড়িটির মালিক রংপুরের আমির উদ্দীন, তিনিই চালান৷ রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফোনে আদনান জানান, দুটি মোটরসাইকেলে চারজন তার গাড়িটিকে অনুসরণ করছে ৷ পরে ‘হয়তো ভয়ে বা উদ্বিগ্ন হয়ে' তিনি বগুড়ার সভায় যোগ না দিয়ে ঢাকার পথ ধরেন৷ তার সঙ্গে আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ নামে যে দুজন ছিলেন তারা আদনানকে বগুড়ার সভায় নিতে এসেছিলেন৷ পরে পরিস্থিতি বুঝে তারা আদনানকে ঢাকা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ রাত আড়াইটার দিকে তার গাড়ি গাবতলী পৌঁছেছে বলে স্ত্রীকে জানান আদনান ৷ এরপর থেকেই আর কোন যোগাযোগ নেই৷
আদনানের প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূরও বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে তার ফোন বন্ধ পান তিনি৷"রাত ২টা ৩৬ মিনিটে আদনানের সাথে আমার শেষ কথা হয় ৷ তিনি তখন বলেছেন কাছাকাছি চলে আসছেন৷''
গাবতলীতে পৌঁছানোর বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার বলেন, সাধারণত আদনান বাড়ির বাইরে গেলে তিনি (স্ত্রী) ফোন করে অবস্থান জানতে চান ৷ আদনান গুগল ম্যাপ থেকে নিজের অবস্থান (লোকেশন) বের করে তার একটা স্ক্রিনশট নিয়ে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন ৷ সর্বশেষ তিনি গাবতলীর লোকেশন পাঠান ৷
কারা আদনানকে ধরে নিতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আদনান বক্তব্যে যেসব কথা বলতেন, তা অনেক সময়ই সরকারের বিপক্ষে যেত৷ এসব নিয়ে নিজের একাধিক বক্তব্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদনান৷''
রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে সাবিকুন্নাহার বলেন, কোনো অপহরণকারী টাকার জন্য এটা করেছে এমনটা তিনি মনে করছেন না ৷
সন্দেহজনক কল, হোয়াটসঅ্যাপ খোলাঃ লাইভে সাবিকুন্নাহার বলেন, আদনান নিখোঁজের পর তার কাছে দুটি সন্দেহজন কল এসেছিল৷ একটা অপরিচিত নম্বর থেকে বলা হয়েছিল, আদনানকে ছাড়াতে টাকা লাগবে৷ এরপর আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি৷
আর অনেকদিন ধরেই বন্ধ আবু ত্ব-হা আদনানের একটি পুরনো নম্বর থেকেও ফোন করে একজন পুরুষ কয়েকবার জানতে চান, ‘আপনি কী আদনানের স্ত্রী ৷' সাবিকুন্নাহার তার পরিচয় জানতে চাইলে ফোনটি কেটে দেওয়া হয় ৷ তবে আদনানের হোয়াটসঅ্যাপ মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য অনলাইন থেকে আবারও অফলাইন হয়ে যাচ্ছে৷ মঙ্গলবার রংপুরের পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন সাবিকুন্নাহারকে দুবার ফোন করে আবু ত্বহার কোনো খবর পাওয়া গেছে কিনা তা জানতে চান এবং খবর পেলে যেন পুলিশকে জানান৷
স্বামীর পাঠানো গাবতলীর লোকেশন ম্যাপ হাতে সাবিকুন্নাহার রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গেলে পুলিশ তার মামলা বা জিডি নেয়নি৷
এ বিষেয়ে দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহাম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদনান কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সে বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আদনানের স্ত্রী অভিযোগ গ্রহণ করা যায়নি৷