Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ রবিবার, মে ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ভৈরব’, ‘মধুমতি’ ও ‘সুখী’র দাম ১ কোটি ৫ লাখ টাকা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২১, ০২:১৭ PM
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১, ০২:১৭ PM

bdmorning Image Preview


এবার কোরবানির হাট মাতাবে বাগেরহাটের ‘ভৈরব’, ‘মধুমতি’ ও ‘সুখী’ নামের তিনটি ষাঁড়। ভৈরব নামের ষাঁড়টির সবচেয়ে বড়। এর ওজন এক হাজার ৮০০ কেজি। দ্বিতীয় সুখীর ওজন এক হাজার ৭০০ কেজি। তৃতীয়টি মধুমতির ওজন এক হাজার ৫০০ কেজি।

বিদেশি জাতের এই ষাঁড় তিনটি আকারে বড় হওয়ায় খামারির বাড়িতে প্রতিদিন দেখতে আসছেন উৎসুক জনতা। তবে তিনটি ষাঁড় এবার কোরবানির হাটে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের খামারি মো. আবুল হোসেন শেখ।

তিনি পেশায় চিংড়ি রেণু পোনা ব্যবসায়ী। সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য নিজ বাড়ির আঙিনায় ছোট পরিসরে করেছেন গরুর খামার। দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই ষাঁড় তিনটি মোটাতাজা করেছেন হোসেন শেখ। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার ছোটভাই ইমরান শেখ। যদিও গত বছরও করোনার কারণে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হোসেন তার  ষাঁড় তিনটি বিক্রি করেননি। এবারও ঠিক একই কারণে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন ভৈরব , মধুমতি ও সুখীর শুকনা খাবার খড় কুড়া ভুসিসহ অন্যান্য উপাদান জোগাতে তাকে গুনতে হয় প্রায় তিন হাজার টাকা।

তবে হোসেন শেখ জানান, এ বছরও তার ষাঁড় গরু কেনার জন্য  ঢাকা ও চট্টগ্রামের  বেপারিরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে বিক্রির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। হয়তো উপযুক্ত মূল্যেই এ বছর ষাঁড় তিনটি হোসেন শেখ বিক্রি করতে পারবেন এমন আশা তার।

বারুইপাড়ার এই খামারি হোসেন শেখ বলেন, তার খামারে ভৈরব নামের সব থেকে বড় অস্ট্রিলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের ওজন (১৮০০ কেজি) ৪৫ মণ। ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার ভৈরবকে ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে তার । একই জাতের ৯ ফুট লম্বা ও ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার মধুমতি নামের ষাঁড়ের ওজন  (১৫০০ কেজি) ৩৫ মণ। এই ষাঁড়টি ২০ লাখ টাকা দামে বিক্রয়ের আশা রয়েছে তার। আর ভৈরবের থেকে এটা ছোট হলেও সব থেকে আকর্ষণীয় আমেরিকান ব্রাহমা জাতের ষাঁড় সুখী দাম চেয়েছেন ৪০ লাখ টাকা। ষাঁড় সুখী লম্বায় ৯ ফুট ও  উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। সুখীর ওজন  (১৭০০ কেজি) ৪০ মণ।

গরু পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আবুল হোসেনের ছোট ভাই ইমরান শেখ বলেন, এই গরু তিনটি কোনো প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ  ও কেমিক্যাল  প্রয়োগ ছাড়াই দেশি পদ্ধতিতে খামারে গত প্রায় তিন বছর ধরে লালন-পালন করা হচ্ছে। খাবার হিসেবে  প্রতিদিনই গরু তিনটিকে ঘাস, খড়-কুটার পাশাপাশি ভুসি, খৈল, ভুট্টার গুড়া, কুড়ার পালিশ ও চিটাগুড় খাওয়ানো হয়।

খামারে গরু দেখতে আসা বশির শেখ বলেন, যাত্রাপুর এলাকায় হোসেনের গরুর মতো এত বড় গরু এই এলাকায় আর নেই। কোরবানির জন্য প্রতিদিন সকাল বিকাল তার বাড়িতে অনেক লোকজন আসেন। গত বছরও এই গরু বেঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।

স্থানীয় সালাম শেখ বলেন, আমাগো এই অঞ্চলে এতবড় গরু, আর একটিও নেই। অনেকে আবার দামদরও করতেছে। করোনায় হাট এবার হবে কিনা বলা মুশকিল।

যদিও বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন বলছে, করোনাকালে কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে জেলার খামারিদের শংকিত হওয়ার কিছু নেই।

এ বিষয়ে কথা হলে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে  করোনার প্রকোপ বেশি হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোরবানির হাটের পরিবর্তে, আমরা অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম  (ফেসবুকে) সদর উপজেলার পক্ষ থেকে ‘কোরবানির পশুর হাট’ নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। যেখানে সদর উপজেলার খামারিরা তাদের গরুর ছবি ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ছবি আপলোড করতে পারেন।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, হোসেন শেখের মতো বেশ কিছু খামারি প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তা নিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বেশ কিছু গরু মোটাতাজা করেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে বাগেরহাট জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৩২ হাজার ৫২০টি। এ চাহিদার বিপরীতে জেলার ছয় হাজার ৪১টি খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৩৬ হাজার ৯৮৫টি পশু। যার মধ্যে ২৫ হাজার ২৫৮টি গরু,  ৫৭৩টি মহিষ এবং ১১ হাজার ১৫৪টি ছাগল/ভেড়া।

Bootstrap Image Preview