গত ৩০ বছর ধরে আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ কার্যালয়ে এটি স্বাভাবিক চিত্র। তবে করোনা পরিস্থিতিতে পাল্টে গেছে এ চিত্র। গত কয়েকদিন ধরে করোনার প্রকোপে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আর এ কারণেই এখন গোসল ও কাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আল-মারকাজুল ইসলামীতে দীর্ঘ মরদেহের সারি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের কার্যালয়ের সামনে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসাবাড়ি থেকে ফোনে মৃতদেহের গোসল ও কাফন কার্যক্রমে সাহায্যের ডাক পেলেই এখান থেকে ছুটে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স এবং নিয়ে আসছে মরদেহ। আবার গোসল ও কাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
মরদেহের গোসল ও কাফন কার্যক্রম প্রসঙ্গে আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের পরিচালক আব্দুর রহমান মামুন বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা মরদেহের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে স্বাভাবিক সময়ে দিনে পাঁচ থেকে সাতটি মরদেহ গোসল করাতে হতো। গত এক সপ্তাহ ধরে সে সংখ্যা দিনে ৩০ থেকে ৩৫ পর্যন্ত যায়। এগুলোর সবই করোনায় মৃত। এর সঙ্গে স্বাভাবিক মরদেহ তো রয়েছেই।
মামুন বলেন, করোনার শুরুর দিকে মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা ভয়ের কারণে আসতে চাইতেন না। কিন্তু এখন সেটি অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। ভীতি কেটে যাওয়ায় এখান থেকে গোসল করিয়ে তারা মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। করোনার শুরু থেকে পরিবার-পরিজন বিহীন অনেক মরদেহ আমরা এখানে এনে গোসল করিয়ে দাফন করেছি। শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মাবলম্বী নয় বরং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও তাদের রীতি অনুযায়ী কার্যক্রম সমাপ্ত করে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট স্থানে।
প্রতিটি মরদেহের দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সুরক্ষা সামগ্রীসহ প্রায় ১২-১৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে যারা মারা যাচ্ছেন করেছেন তাদের দাফন-কাফন কার্যক্রম আমরা বিনামূল্যে করে দিচ্ছি। দূরযাত্রায় যারা কফিন নিতে চান, শুধু সেটির দাম আমরা রাখছি। মানুষের সহায়তায় আমাদের পথচলা।
এছাড়াও এ পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত চার হাজার ৯০০ জনকে বিনামূল্যে গোসল, কাফন ও দাফন কার্যক্রমে সহায়তা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোসল ও কাফন কার্যক্রমে সরাসরি যারা জড়িত, তাদের কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বড় কোনো সমস্যায় কেউ পড়েননি। এমনটিই জানালেন গোসল ও কাফন কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত স্বেচ্ছাসেবী আবুল হাসান।
তিনি বলেন, একের পর এক মরদেহ আসছে। গোসল করিয়ে কূল পাচ্ছি না। অনেক সময় একসঙ্গে আট থেকে ১০টি মরদেহও চলে আসে। এগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী গোসল এবং কাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বেশ হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে আমাদের। তারপরও চেষ্টার কোনো কমতি নেই। পরম মমতায় মৃতদের গোসল ও কাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করছি।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়াদের মরদেহ আসছে সারাদিনই। বিশেষ করে সকালে এবং দুপুরের দিকে একসঙ্গে অনেক মরদেহ চলে আসে। তখন বেশি হিমশিম খেতে হয়।
নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি শহিদুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংস্থাটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মৃতদেহ গোসল ও দাফন কার্যক্রমসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।