দেশের আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-ভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দুদকের ৩৩৮ কোটি টাকা জালিয়াতি বা আত্মসাতের তদন্ত চলমান থাকায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
গত ৪ জুলাই, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করে ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে দুদক।
এজন্য গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে কমিশন। টিমের আরেক সদস্য হলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শিহাব সালাম।
গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা।
গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩.৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের নিকট হতে ১৮৯.৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৩.৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।
গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির প্রকৃত দেনা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এজন্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে কোম্পানির ডাটাবেজে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।
দুদক বলছে, ইভ্যালির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের অনুসন্ধানকালে তারা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুদক মনে করছে, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করলে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এ কারণে তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এব্যাপারে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে, ইভ্যালির এমডি ও মুখ্য নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলবলেন, ইভ্যালি দুদকের অনুসন্ধানী দলকে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে।
তবে একইসঙ্গে তার দাবি, অর্থ আত্মসাতের কারণে নয়, বরং ব্যবসা উন্নয়নের কারণেই কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে।