করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও ঈদুল আজহা বিবেচনায় নিয়ে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া চলমান লকডাউন কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবছে সরকার। তবে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। সেই সঙ্গে আহ্বান থাকছে, মানুষ যেন ছোটাছুটি না করে নিজ নিজ অবস্থানে ঈদ উদযাপন করেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে রোববার এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা এবং পশুর হাটের বড় বাণিজ্য এসব বিবেচনায় রেখে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করার পরিকল্পনা চলছে। তবে কীভাবে এটা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
শিথিল লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে পারবে কি না, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সোম বা মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কার করা হবে।
১ জুলাই থেকে চলমান শাটডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে আসা বারণ। রিকশা ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। এ অবস্থা চলবে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত।
মানুষের অযাচিত চলাচল ঠেকাতে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়কে পড়তে হচ্ছে পুলিশি তল্লাশির মুখে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মাঠে আছে বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
এ সময়ের মধ্যে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খোলা জায়গায় বিক্রির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট। বন্ধ পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান তথা ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধের আওতায় রেখেছে সরকার।
শাটডাউনের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি আর কারিগরি কমিটির পরামর্শ মাথায় রেখে সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, যে পরিস্থিতি আছে তাতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে চলে যাওয়ার মতো অবস্থায় এখনও পৌঁছাতে পারি নাই।’
রোজার ঈদে ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছিল সরকার। কর্তৃপক্ষের অনুরোধ তোয়াক্কা না করে বাড়িমুখী হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। গত ১২ মে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে দুটি ফেরি থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পাঁচজনের মৃত্যুও হয়েছিল। ওই ঘটনায় পদদলিত হয়ে আহত হয় অর্ধশতাধিক।
এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে এবারও। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ বলেই বিধিনিষেধ থাকার পরও ফেরিঘাটে ভিড় সামাল দিতে গিয়ে ঘরমুখী মানুষের ওপর আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘ফেরিতে মানুষ চলে যাচ্ছে, প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক একটা দেশে আমরা এই মানুষগুলোর ওপরে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় চলে যেতে পারি না। কাজেই পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার সেটাই নিচ্ছে।’
সরকারের বিধিনিষেধগুলো মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঘিরে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য না দেয়ার জন্য আমি সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাব।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়িগুলো যখন ঘাটে ভেড়ে, তখন মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলোর প্রতি আমরা আক্রমণাত্মক হতে পারি না। তখন স্থানীয় প্রশাসন অবস্থা বুঝেই সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মন্ত্রণালয় বা সচিবালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া কঠিন। স্থানীয় পর্যায়ে যারা আছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা প্রশাসনযন্ত্রের যারা আছেন তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে।’
সূত্রঃ নিউজবাংলা