সাধারণ সময়ে ঈদুল ফিতর বা আজহা উপলক্ষে আট থেকে ১০ দিন আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকে। কিন্তু এবার এই টার্মিনালের চিত্র ভিন্ন। ঈদের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ছাড়ছেন অনেক মানুষ। সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে যখন মানুষের ঢাকায় ফেরার কথা ঠিক তখনই উল্টো চিত্র। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল।
সরকারের আগাম ঘোষনা দেয়া কঠোর লকডাউনের ঠিক আগেরদিন মানুষের ঢাকা ছাড়ার এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারি ও দিনমজুরদের মধ্যে। দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকতে হবে এমন ভাবনাতেই তারা বাড়ির দিকে ছুটছেন।
ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকালেই দেখা যায় মানুষের আনাগোনা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ভীড়। ঈদের আগে লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় অনেকে নিরিবিল বাড়ি ফেরার জন্য এমন সময় বেছে নিয়েছেন। আর লকডাউনের কারণে ঢাকায় ‘বন্দি’ হয়ে থাকার চেয়ে কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে থাকাকে নিরাপদ ভাবছেন।
ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার থেকে পূর্বঘোষিত লকডাউন শুরুর কথা রয়েছে। এই বিষয়কে মাথায় রেখে ঢাকা ছাড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, সেখানে চাঁদপুর, চরভৈরব, লক্ষ্মীপুর, শৌলা, মুলাদি, দেউলা, নাজিরপুর, লালমোহন, ভোলা ও বরিশালগামী যাত্রীদের ভিড় বেশি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের কাছে লকডাউনের ঘোষণা চলে এসেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল থেকে সব বন্ধ থাকবে। তার আগে ভোর পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে।’
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নৈশ প্রহরী সুমন জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে যেসব লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছেছে তাতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। আর সকালে বেড়েছে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড়।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় করতে শুরু করেছেন অনেকে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোর বেশিরভাগ লঞ্চ ছাড়ে সন্ধ্যার পর। দুপুরের পর ভিড় বাড়বে।’
লঞ্চ টার্মিনালের ভেতরে অপেক্ষমান যাত্রী মতিয়ার হোসেন। যাবেন চাঁদপুর। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছেন।
ঢাকা ছাড়ার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ভিড় ছিল, তাই ঝুঁকি নিতে চাইনি। এছাড়া লকডাউন শুরু হবে, সে সময় ঢাকায় থাকা সম্ভব না। তাই বাড়ি যাচ্ছি।’
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন ঢাকা ছেড়ে যাওয়াদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকবে এমন বিষয় মাথায় রেখে তারা ঢাকা ছাড়ছেন। ঢাকায় থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে যাচ্ছেন। লকডাউনে তাদের রোজগার বন্ধ থাকবে- এই আশংকা থেকে শহর ছাড়ছেন তারা।
ঢাকায় মিরপুরে একটি হোটেলে কাজ করেন সুমন হোসেন। তিনি যাবেন বরিশালে। ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেননি। লকডাউনে সব বন্ধ থাকবে- এমন বিবেচনা করে ঢাকা ছাড়ছেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি ভাই, ঈদের আগে যাইতে পারি নাই। লকডাউন দিবো এইটা শুইনা মালিকরে কইছি- বাড়ি যামুগা। কাজ শুরু হইলে তখন আবার বইলেন।’
ঢাকার গুলিস্থানে রিকশাভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করেন কাওসার হোসেন। তিনি মাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছেন ভোলা।
কাওসার বলেন, ‘এভাবে তো ভাই চলা যায় না। সময় নাই, অসময় নাই, সব বন্ধ করে দেয়। ঈদের আগে যাইতে পারি নাই। ব্যবসা বন্ধ। আবার লকডাউন দিবো, তাই যাইতেছি গা।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দিলেও তা মানতে অনীহা দেখা যায় যাত্রীদের মাঝে। তারা সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এমনকি বেশির ভাগ যাত্রী মাস্ক সাথে রাখলেও সুযোগ পেলেই খুলে রাখছেন।