Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

লাখ টাকার আয়রন ব্রিজ গেলো কোথায়?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২১, ১২:২৫ AM
আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১, ১২:২৫ AM

bdmorning Image Preview


বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি ইউনিয়নের পূর্ব উদয়কাঠি মুন্সি বাড়ির সামনের খালে একটি আয়রন ব্রিজের পাটাতনে লোহার বিম এবং তার ওপর রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাবের পরিবর্তে সুপারি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে।

সোমবার (২৬ জুলাই) স্থানীয় কেউ ব্রিজের স্থলে নির্মাণ করা সাঁকোটির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়।

বানারীপাড়া উপজেলায় এনিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। পোস্টে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ ওই সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

পূর্ব উদয়কাঠি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব উদয়কাঠি গ্রামের মুন্সি বাড়ির সামনের খালে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি আয়রন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর ওই বছরের শেষ দিকে একজন ঠিকাদার কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে খালে লোহার দুটি করে চারটি বিম (খুঁটি) স্থাপন করেন। এরপর দুটি বিমের ওপরের অংশে ৫-৬ ফুট ছোট বিম দিয়ে জুড়ে দেয়া হয়। অন্য দুটি বিমকেও একইভাবে জুড়ে দিয়ে এর ওপর সুপারি গাছ দিয়ে পাটাতন দেয়া হয়। এরপর ঠিকাদার ও শ্রমিকরা চলে যান।

গত কয়েক মাস আগে ওই সাঁকোর পাশে ঠিকাদারের লোকজন এসে ভিত্তিপ্রস্তর ফলক স্থাপন করেন। তাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক লাখ টাকা ব্যয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের কথা লেখা রয়েছে। তবে ফলকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। ফলকে অর্থায়নে ও বাস্তবায়নে জেলা পরিষদের কথা উল্লেখ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উদয়কাঠি ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি আয়রন ব্রিজ আছে। ব্রিজগুলোর পাটাতনে লোহার বিমের ওপর রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাব রয়েছে। ব্রিজের দুই পাশে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে রেলিং দেয়া রয়েছে। কিন্তু পূর্ব উদয়কাঠি মুন্সি বাড়ির সামনের খালের ওপর আয়রন ব্রিজে রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাবের পরিবর্তে সুপারি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, রেলিংও দেয়া হয়নি। ফলে মুন্সি বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সাঁকোটি নির্মাণে এক লাখ টাকা ব্যয় ফলকে লেখা থকলেও ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে কি-না তা নিয়ে গ্রামের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

উদয়কাঠি ইউনিয়নের বাসিন্দা, বরিশাল জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এবং বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই সময় ব্রিজ নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আয়রন ব্রিজে এক লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল। ওই টাকা দিয়ে যা করা সম্ভব ছিল খালের ওপর তাই করা হয়েছে।

জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বদলি হয়ে বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ঝালকাঠীর রাজাপুর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগের কথা। ঠিকমতো সব কিছু মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয়রন ব্রিজটি নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর যথাযথ নিয়ম মেনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। লটারির মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজটি পায়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারের নাম মনে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ শুরুর পর জানিয়েছিলেন, খালের যে অংশে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করার কথা, সেখানে এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুটের বেশি। ব্রিজের প্রস্থ ৬ ফুটের বেশি। এ ধরনের একটি ব্রিজ নিয়মমতো নির্মাণ করতে গেলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার প্রয়োজন। তখন পাঁচ পার্সেন্ট লেস ও আইটি ভ্যাট ১০ পার্সেন্ট পরিশোধ করে ৮৫ হাজার টাকার মতো ব্রিজ নির্মাণের জন্য ছিল। ওই টাকা দিয়ে যা সম্ভব হয়েছে, সেভাবেই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বানারীপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, নির্মাণকাজটির তদারকির দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা পরিষদের একজন প্রকৌশলী। এখানে তার (উপজেলা প্রকৌশলী) কোনো দায়িত্ব ছিল না। তবে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থ একটি আয়রন ব্রিজ রড-সিমেন্টের ঢালাই স্লাব দিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দে হয়তো নির্মাণ করা সম্ভব।

বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বানারীপাড়া উপজেলার পূর্ব উদয়কাঠি ব্রিজ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি জানাও ছিল না। তবে এখন জানলাম। কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।

Bootstrap Image Preview