Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ সোমবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

টাইটানিকের মতো পদ্মায় খোঁজ মিলবে পিনাক-৬-এর?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২১, ০৩:০৪ PM
আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২১, ০৩:৪৪ PM

bdmorning Image Preview


পিনাক-৬ লঞ্চডুবির পাঁচ বছর আজ। পদ্মায় হারিয়ে যাওয়া লঞ্চটির সন্ধান মেলেনি এই দীর্ঘ সময়েও। লঞ্চটির হদিসও মেলেনি আর। হয়তো কোনোদিন টাইটানিকের মতো বেরিয়ে আসতে পারে পদ্মার বুক চিরে পিনাক-৬ লঞ্চটি। জন্ম দিতে পারে ইতিহাসের।

ওই ঘটনায় সরকারি হিসাবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৫৩ যাত্রী। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সে সময় এ দুর্ঘটনায় ৪৯ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার হয়।

২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ঈদুল ফিতরের মাত্র কয়েক দিন পরে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। মাওয়ার অদূরে এসে লঞ্চটি পদ্মার ঘূর্ণাবতে নদীর বুকে হারিয়ে যায়। পাশ দিয়ে যাওয়া অপর একটি লঞ্চ থেকে এক যাত্রী এই লঞ্চডুবির দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করেন, যা পরে গণমাধ্যমে দেখতে পায় দেশবাসী।

সে সময়ে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে কয়েক দিন চেষ্টা করেও লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হয়, লঞ্চটি শনাক্তই করা যায়নি। তবে সোনার স্ক্যান দিয়ে পদ্মা নদীতে লঞ্চের মতো কিছু একটার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেটাকে লক্ষ্য করে উদ্ধার অভিযান চলে। কিন্তু কী করে সম্ভব? পদ্মায় তখন প্রচণ্ড স্রোত। ওই স্থানটির গভীরতা ছিল প্রায় ৮০ ফুট। স্রোতের তোড়ে ডুবুরিরা কিছুতেই পানির নিচে যেতে পারছিলেন না। এমনকি নোঙর করে রশি ধরেও নিচে যাওয়া সম্ভব ছিল না ডুবুরিদের। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, কিছুর সঙ্গে লঞ্চটি আটকাতে পারলে লঞ্চটিকে টেনে পাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে। একসময় ওই লঞ্চের মতো বস্তুটিকে বাঁশ ও নোঙরের সঙ্গে আটকানো সম্ভবও হয়। কিন্তু মাত্র চার মিনিটের মাথায় সে বস্তুটিও ছুটে যায়। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ প্রায় আট দিন পরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে।

এরই মধ্যে লঞ্চটি উদ্ধারে আশার আলো দেখায় স্থানীয় উদ্ধারকারী একটি দল। তারা কোপা দিয়ে লঞ্চটি আটকাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করে। কিন্তু তাতে প্রশাসনের দৃষ্টি ছিল না। কারণ, আধুনিক সব যন্ত্রপাতি যখন ব্যর্থ করছে লঞ্চটি শনাক্তে, তখন এটা তাঁদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। আর স্থানীয় ওই উদ্ধারকারী দলটি শনাক্তকারী (দাবি অনুযায়ী) ওই লঞ্চটি কোপা দিয়ে আটকানো রশির মাথায় লাল কাপড় বেঁধে ভাসমান ড্রাম বেঁধে রাখে। স্রোত আর পানি কমলে লঞ্চটি উদ্ধার করা হবে বলে দাবি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ তা আর সম্ভব হয়নি। সর্বনাশী পদ্মার স্রোত রশি থেকে ভাসমান ড্রামটি ছুটিয়ে নিয়ে যায়। হারিয়ে যায় স্থানীয় উদ্ধারকারী দলটির সর্বশেষ নিশানা। তাই পদ্মার তলদেশ থেকে আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি পিনাক-৬ লঞ্চটি।

স্থানীয়দের মুখে মুখে শোনা যায়, এটি হয়তো একদিন টাইটানিকের মতো পদ্মার বুকে আবিষ্কৃত হবে।

ওই লঞ্চ দুর্ঘটনায় এমনও পরিবার ছিল, যাদের সবাই লাশ হয়েছেন অথবা নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের জন্য কান্নার কেউ ছিল না সেদিন। দুর্ঘটনার পরের দিন ৫ আগস্ট রাতে ‘অধিক মুনাফার আশায় ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বেপোরোয়া লঞ্চ চালিয়ে অবহেলাজনিত হত্যার’ অপরাধে ছয়জনকে আসামি করে লৌহজং থানায় মামলা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর আগে ৪ আগস্ট ঘটনার দিন মেরিন কোর্টে পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। পরে গ্রেপ্তার করা হয় পিনাক-৬-এর মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক কালু ও তাঁর ছেলে ওমর ফারুক লিমনকে।

লৌহজং থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি। গতকাল শনিবার তিনি বলেন, ‘আমি এ থানায় নতুন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম। আমি আসলে বিষয়টি অবগত নই।’

Bootstrap Image Preview