মিথ্যা অপবাদ, সম্মানহানি করা, পারিবারিকভাবে অপদস্থ করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে নায়িকা পরিমণির বিরুদ্ধে মামলা করবেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আজ কিংবা কাল যেকোনও সময় তিনি বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করবেন। বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন নিজে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমি মামলা করার জন্য প্রস্তুত। আজ করব কিনা বা কখন করব কিভাবে করব এ ব্যাপারে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে মামলা দায়ের করব। আমার সম্পর্কে যে ধরনের অভিযোগ করেছেন সবই মিথ্যা, পারিবারিকভাবে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত মান-সম্মান সবকিছুই মিশে গেছে এ ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের কারণে। একাধিক মামলাও হতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ।
গত জুন মাসে রাজধানীর একটি ক্লাবে পরীমণিকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে নাসির ইউ আহমেদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগও তিনি ফেসবুক লাইভে এসে জানান। এরপর তা আমলে নেয় প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে পরীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। যদিও প্রধান অভিযুক্ত নাসির গ্রেফতারের কয়েক দিন পরই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান। ২৯ জুন আদালত থেকে জামিন পান তিনি। এরপর সাংবাদিকদের কাছে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন নাসির।
নাসির দাবি করেন সেই রাতে পরীমনি মদ্যপ অবস্থায় ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে আবারও মদের অর্ডার দেন। সঙ্গীদের নিয়ে দুই বোতল মদ খাওয়ার পর একটি দামি ব্র্যান্ডের মদের অর্ডার দেন। ওয়েটাররা দিতে না চাইলে নিজ হাতে পরী সেটি বারের সেলফ থেকে নিয়ে আসেন। এতে বাধা দিলে পরীমনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে নাসির আরও বলেন, সম্প্রতি আমাকে নিয়ে প্রচারিত একটি মিথ্যা ঘটনা নিয়ে নায়িকা পরীমনি যে অপপ্রচার করেছেন তা আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন।
আপনাদের সদয় অবগতির জন্য সেদিন আসলে কী ঘটেছিল তা আমি বলতে চাই।
আমি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে ক্লাবের ডিসিপ্লিন, মেনটেইন্যান্স, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও এন্টারটেইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত।
সেদিন রাত আনুমানিক ১২টায় বোট ক্লাবেরই একজন সদস্যের সঙ্গে তিনজন অতিথি ক্লাবের বারে প্রবেশ করেন।
আমি তখন অন্য টেবিলে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমি দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম তারা ( পরীমনিসহ ওই চারজন) মদ্যপ অবস্থায়ই ক্লাবে প্রবেশ করেন। এ অবস্থায় তারা আমাদের পাশের একটি টেবিলে বসেন এবং ওয়েটারদের ড্রিংকসের বোতল দিতে বলেন। ওয়েটাররা এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে সার্ভ করেন, তা অতিদ্রুত তারা শেষ করে ফেলেন এবং আরও এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে আনান এবং সেই বোতলের অর্ধেকেরও বেশি শেষ করে ফেলেন। এ সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীমনি (যার নাম আমি পরে জেনেছি) একটি দামি তিন লিটারের ‘ব্লু লেবেল’র বোতল বারের সেলফ থেকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে টেবিলে আসেন এবং তা সঙ্গে নিতে চান।
এ সময় ওয়েটাররা তা নিতে বাধা দিলে পরীমনি ক্ষিপ্ত হন এবং ওয়েটারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে টেবিলে রাখা প্লেট-গ্লাস অনবরত ছুড়ে ভাঙতে থাকেন।
যেহেতু আমি ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইনচার্জ, সেহেতু বিষয়টির ব্যাপারে ওয়েটাররা আমার সাহায্য চায়। তখন আমি পরীমনিদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলি এই ড্রিংকসের বোতল বিক্রি যোগ্য নয়।
সেই সময় পরীমনি আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন এবং টেবিলে রাখা প্লেট, গ্লাস ছুড়ে মারতে থাকেন। আমি তাকে বারবার অনুরোধ করি, যাতে তিনি এসব থেকে নিভৃত হন। কিন্তু পরীমনি তা কর্ণপাত না করে উল্টো আমাকে লক্ষ্য করে গ্লাস ছুড়তে থাকেন এবং একসময় একটি গ্লাস আমার ঘাড়ে লাগে। পরে আরও গ্লাস ছুড়তে চেষ্টা করলে আমি তাকে শান্ত হতে বলি। সে মুহূর্তে তার সঙ্গে আসা জিমি (পরে নাম জেনেছি) আমার ওপর চড়াও হন।
এ অবস্থায় ক্লাবের বাইরে দায়িত্বরত সিকিউরিটি স্টাফদের ডাকি। কিছুক্ষণ পরেই ক্লাবের সিকিউরিটিরা উপস্থিত হন এবং বলি তাদের ক্লাব থেকে বের করে দিতে। এ কথা বলে আমি ক্লাব ত্যাগ করি।
ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর পরীমনি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আমাকে নিয়ে তার মিথ্যাচারে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি।
ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী নাসির বিবৃতিতে আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মহামান্য আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি ন্যায়বিচার পাব।
প্রসঙ্গত গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন, তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি। ১৩ জুন রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, গত ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে তিনি আশুলিয়ার একটি ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
কে এই নাসির ইউ মাহমুদ? পরপর দুই বছর ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে উত্তরা ক্লাবের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পপতি নাসির ইউ মাহমুদ। নির্বাচনে নাসির ইউ মাহমুদ ৬৭২ ভোট পান। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা বোট ক্লাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। নিজস্ব আবাসন প্রকল্প ‘কুঞ্জ ডেভলপারর্স লি.’ এর চেয়ারম্যান নাসির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। ওই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার স্ত্রী জীবিত রয়েছেন। তাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে একই আবাসন প্রকল্পের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর।