মৌখিক তিন তালাকের জেরে পঞ্চগড়ে এক দম্পতিকে দুই মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন সমাজপতিরা। হিল্লা বিয়ে না করায় ওই দম্পতিকে সমাজচ্যুত করে একঘরে রাখেন তারা। জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুন্দরদিঘি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছলিমনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার পঞ্চগড় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই নির্দেশ দেয়। ২২ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিল্লা বিয়ে না করায় এক দম্পতিকে এলাকার প্রভাবশালীদের মাধ্যমে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জামাল হোসেনকে এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার পঞ্চগড় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেয়। ২২ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন দেবীগঞ্জ থানার ওসি জামাল হোসেন।
ওসি জানান, দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ছলিমনগর এলাকার আয়নাল হক ও জমিরন বেগম ৩০ বছর ধরে সংসার করছেন। প্রায় দুই মাস আগে হঠাৎ তাদের মধ্যে পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগের বসে তারা একে অপরকে তিন তালাক বলেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। তারা জমিরন ও আয়নালকে হিল্লা বিয়ে করে সংসার করতে বলেন। তাদের কথা না মানলে আয়নাল-জমিরন একসঙ্গে থাকতে পারবেন না বলে জানানো হয়। এমনকি তাদের একঘরে করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
আয়নাল ও জমিরনের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এক মাওলানার বাড়ি গিয়ে বিয়ে করে আবার সংসার শুরু করেন। এতে প্রভাবশালীরা ক্ষুব্ধ তাদের বিছিন্ন করে দেন। আয়নালকে রাখা হয় নিজ বাড়িতে, পাশেই ছেলের বাড়িতে পাঠানো হয় জরিমনকে।
এলাকার সবার সঙ্গে ওই দম্পতির কথা বলা, তাদের বাড়িতে যাতায়াতসহ সবকিছুতে বাধা দেয়া হয়। প্রায় দুই মাস ধরে আলাদা ছিলেন আয়নাল-জমিরন।
এ ঘটনায় ৯ আগস্ট দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রত্যয় হাসান বরাবর এলাকার ১০ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন জমিরন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আয়নাল-জমিরন দম্পতির বিষয়ে ১১ আগস্ট একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আদালত আমলে নেয়।
আদালতের আদেশে বলা হয়, মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম এক বৈঠকে বা একসঙ্গে একাধিকবার তালাক শব্দটি উচ্চারণ করলে তা এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে আপোষ ও সমঝোতায় স্বামী-স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে ছাড়া সংসার করতে বাধা নেই।
তবে আলোচ্য ঘটনায় দেবীগঞ্জের স্থানীয় প্রভাবশালীরা মনগড়া ফতোয়া জারি করে অন্যায়ভাবে আয়নাল-জমিরন দম্পতিকে দুই মাস ধরে বিছিন্ন রেখেছিলেন। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ।
১২ আগস্ট ইউএনও প্রত্যয় হাসান স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে মীমাংসা করেন। তিনি ওই দম্পতিকে একসঙ্গে থাকতে বলেন এবং এলাকার কেউ যেনো তাদের সামাজিকভাবে হেয় না করে সে নির্দেশ দেন।
দেবীগঞ্জ থানার ওসি জামাল হোসেন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনায় বিষয়টি জানতে পেরেছি। নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।’