রাজশাহীর তানোরে পৃথক খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মাকে হত্যার ঘটনায় নিহতের একমাত্র ছেলে তালাসকে (১৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া অপর ঘটনায় স্ত্রীর প্রেমিক হত্যায় স্বামী শ্রী জিতেন চন্দ্র পণ্ডিত (৪৬) ও তার ভাই শ্রী জয় চন্দ্র পণ্ডিতকেও (২১) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পৃথক এ দুটি ঘটনায় তানোর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন-মনিরুল ইসলাম (৩৮) ও গৃহবধূ তহুরা বেগম (৩৯)।
শনিবার দুপুরে তানোর থানার ওসি রাকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পরকীয়া প্রেমের দায়ে মনিরুল ইসলামকে (৩৮) হত্যা করা হয়। নিহত মনিরুল উপজেলার কামারগাঁ ইউপির দূর্গাপুর গ্রামের মৃত শুকুর উদ্দিন মোল্লার ছেলে।
পড়তে বলায় মাকে খুন করল ছেলে: গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে একমাত্র ছেলেকে পড়তে বসতে বলাই মা তহুরা বেগমকে (৩৯) হত্যা করে লাশ বাড়ির বাইরে ফেলে রাখে ছেলে তালাস। নিহত তহুরা বেগম বর্তমানে মুণ্ডুমালা পৌর এলাকার টকটকিয়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি আহম্মদ হাজীর মেয়ে।
পুলিশ জানায়, প্রায় ১৮ বছর আগে তানোর পৌর এলাকায় বুরুজ মহল্লার বাসিন্দা কাইয়ুম মিয়ার সঙ্গে তহুরার বিয়ে হয়।
তহুরার স্বামী কাইয়ুম মিয়া তিন বছর আগে হেরোইনসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। এরপর থেকে তহুরা তার একমাত্র ছেলে তালাসকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো বাড়ির সবাই গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে বাড়ির পাশে মাটিতে তহুরার লাশ দেখতে পান পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় ওই দিনই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নিহত তহুরার বাবা আহম্মদ হাজী মামলা দায়ের করেন।
মামলার সূত্র ধরে ওসি জানান, মৃত তহুরা ও তার ছেলে এক ঘরে ঘুমাতেন। ছেলে গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করে। ঘটনার রাতে তহুরা তার ছেলেকে পড়তে বসতে বললে সে শুয়ে পড়ে। এতে তার মা তাকে ধমক ও থাপ্পড় দেয়। আরেকটা থাপ্পড় মারতে গেলে ছেলে মাকে ধাক্কা দেয়। এতে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তহুরা। ঘটনার পর ছেলে মায়ের মরদেহ বাইরে রেখে আসে।
অপর ঘটনা নিয়ে ওসি আরও জানান, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির দূর্গাপুর গ্রামের শ্রী জিতেন চন্দ্র পণ্ডিতের স্ত্রী শ্রীমতি কামনা রানী বেশ কয়েক মাস আগে একই গ্রামের নিহত মনিরুলের পরকীয়া প্রেমে আবদ্ধ হন। এ ঘটনা পরিবারের লোকজন জানতে পারে। পরে কামনা রানীর ঘরে মনিরুলকে দেখে জিতেন ও তার ভাই জয় পণ্ডিত ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তারা গ্রামের পাশে তানোর-চৌবাড়িয়া সড়কের ধানক্ষেতে ড্রেনের ভিতরে নিহতের লাশ ফেলে আসে।
তবে, সার্বিক বিবেচনায় দুটি ঘটনায় মৃতের পরিবারকেই সন্দেহ হতে থাকে। ফলে ৩১ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ আব্দুল বারী মৃত তহুরার ছেলেকে আর অপর ঘটনায় জিতেন চন্দ্র পণ্ডিতকে ডেকে নিয়ে জেরা করলে হত্যা ঘটনা স্বীকার করে তারা।
পরে রাজশাহীর বিজ্ঞআদালতে হাজির করা হয়। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামিরা।