বন্ধুরা চাইতো না ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কিশোরীর সঙ্গে মো. ডায়মন্ডের প্রেমের সম্পর্ক অটুট থাক। এজন্য প্রেমিক ডায়মন্ডের অজান্তে তার ফোন থেকেই কল দিয়ে ওই কিশোরীকে আল-আমিন জানিয়েছিল, ‘ডায়মন্ড তাকে ভালোবাসে না’। শুধু তাই না, প্রেমিকের বন্ধুদের কাছে যৌন হয়রানিরও শিকার হয় ওই কিশোরী। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। প্রতিশোধ নিতে বন্ধু আল-আমিনকে হত্যা করে কিশোরীর প্রেমিক ডায়মন্ড (২৮)। আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে আল-আমিন (২৫) খুনের ঘটনায় হত্যা মামলা।
হত্যা মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই কাহিনী। গতকাল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ডায়মন্ডকে দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। তারপর এ বিষয়ে সিআইডি’র সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সিআইডি’র প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ডায়মন্ড।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গত ৩রা সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ফেনী পৌরসভার পশ্চিম বিজয়সিংহ লুদ্দারপাড় গ্রামের একটি টিনশেড কলোনিতে আল- আমিন নামে এক খুদে বিক্রেতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। আল-আমিন, তার বড় ভাই তোফাজ্জল হোসেন (২৭) ও আসামি মো. ডায়মন্ড ওই টিনশেড কলোনির একটি কক্ষে ভাড়া থাকতো। তারা তিনজনই ফেনী শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় হরেক রকমের জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করতো।
আসামি ডায়মন্ডের সঙ্গে নিজ গ্রামের কুমারী পপি মণ্ডল (১৫) নামে এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। যদিও সম্পর্কটি বেশিদিন টেকেনি। ভুল বোঝাবুঝির বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। এর কিছুদিন পর পপি বিষপান করে আত্মহত্যা করে। পপির আত্মহত্যার পর ডায়মন্ড জানতে পারে আল-আমিন ইচ্ছা করে সুকৌশলে তার (ডায়মন্ডের) ফোন ব্যবহার করে পপিকে বলেছে, ‘ডায়মন্ড তাকে ভালোবাসে না’। যার পরিপ্রেক্ষিতেই পপি আত্মহত্যা করেছে। ডায়মন্ড আরও জানতে পারে আল-আমিন তার তিন সহযোগী রুবেল মণ্ডল (২২), হাসিবুর রহমান (২৩), আবু বক্কর (২৩) কে নিয়ে পপির ঘরে ঢুকে তাকে যৌন নিপীড়ন করেছিলো।
সিআইডি কর্মকর্তা মুক্তা ধর আরও বলেন, ডায়মন্ড এসব ঘটনা জানতে পেরে আল-আমিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ৩রা সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে সে ছুরি নিয়ে আল-আমিনের ওপর হামলা চালায়। তার বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় আল- আমিনকে বাঁচাতে আল-আমিনের বড় ভাই তোফাজ্জল এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে ডায়মন্ড। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে ডায়মন্ড দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সিআইডি’র বিশেষ সুপার মুক্তা ধর সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় নওগাঁয় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। আর ডায়মন্ডকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন আল-আমিনের চাচা। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় সিআইডি তদন্ত শুরু করে। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ডায়মন্ডকে দিনাজপুরের হাকিমপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তিনি জানান, কিশোরীর মৃত্যু ডায়মন্ড মেনে নিতে পারছিলো না। তার সারা হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ রয়েছে। এখন অপমৃত্যুর এ মামলা নতুনভাবে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আল-আমিনের সঙ্গে আরও যারা ছিলো, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মৃত কিশোরী পপি মণ্ডল, ডায়মন্ড, আল-আমিন, আল-আমিনের বড় ভাই তোফাজ্জল হোসেন সবাই নওগাঁর মান্দা উপজেলার রাজেন্দ্রবাটী গ্রামের বাসিন্দা। তবে কাজের সূত্রে খুদে ব্যবসায়ী ডায়মন্ড, আল-আমিন ও তোফাজ্জল ফেনীর পশ্চিম বিজয়সিংহ লুদ্দারপাড় গ্রামের ফরিদ মিয়ার টিনশেড কলোনিতে থাকতো। ২/১ মাস পর পর নওগাঁয় যেতো।