তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বানার, বংশী ও চিলাই নদীবেষ্টিত জেলা গাজীপুর। করোনার সংক্রমণরোধে ঘোষিত লকডাউনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল অরক্ষিত নদীপথে নৌকায় ভ্রমণ। কিন্তু এ ভ্রমণের আড়ালে এক শ্রেণির তরুণ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপকাণ্ডে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নৌ ভ্রমণের নামে নৌকাতে বাজানো হয় উচ্চস্বরে আধুনিক শব্দযন্ত্রের গান, চলে ডিজে পার্টির নামে অশ্লীল নৃত্য, বসে জুয়া ও মাদকের আসর। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, নৌকাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপকর্ম হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি নেই। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে নৌকা ভ্রমণে আসা কিশোর, তরুণ ও যুবারা।
শীতলক্ষ্যার পাড়ঘেঁষা কাপাসিয়ার কুড়িয়াদি গ্রামের মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, নৌকা ভ্রমণের নামে নদীতে অশ্লীল নাচানাচি, গান বাজানোসহ খারাপ অঙ্গভঙ্গি করে উঠতি বয়সের ছেলেরা। বিশেষ করে স্থানীয় নারীদের নদীতে গোসলে দেখলে তারা অশোভন আচরণ করে। এ নিয়ে কেউ কিছু বলছে না বিধায় এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
রায়েদ এলাকায় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন বিমল সাহা। তিনি বলেন, রাতে নদীতে জেলেরা মাছ ধরেন। অথচ সন্ধ্যা হলেই নদীতে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। বিশেষ করে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে জুয়ার আসর বসে।
কাপাসিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. আল আমিন বলেন, ব্যবসার ফাঁকে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে পরিবার নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম। কিন্তু বেশিরভাগ নৌকায় যেভাবে অশ্লীলতা চলছিল, তাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
নদীকেন্দ্রিক হওয়ায় কয়েকশ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে শ্রীপুরের বরমী বাজারের। বাজারের মুদি দোকানি রিপন সাহা জানান, পিকনিক বা ভ্রমণের কোনো নৌকা ঘাটে ভিড়তেই তাতে তাসের বান্ডেল কেনার হিড়িক পড়ে। তারা নৌকাতে বসেই আনন্দের ছলে জুয়া খেলায় মেতে ওঠে। চলে মাদকের আড্ডা, আর বাজে অঙ্গভঙ্গির নাচানাচি। নৌ ভ্রমণের নামে এসব বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা বলেন, নদীপথে নৌ ভ্রমণের নামে উঠতি বয়সের ছেলেদের নাচানাচি আর হুড়োহুড়িতে অনেকেই উত্ত্যক্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক সময় অভিযানে গেলে প্রশাসন ও পুলিশ দেখে নৌকা ভ্রমণে আসা অনেকেই ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। এতে দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীপথে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুরের আবদুল আওয়াল কলেজের অধ্যক্ষ (মনোবিদ) রফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময় সুস্থ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌকা ভ্রমণ। এটি শিশু-কিশোরসহ উঠতি বয়সের জন্য ছিল শিক্ষণীয় একটি বিষয়। প্রাকৃতিক মুগ্ধতা পেতে অনেকেই নৌ ভ্রমণে অংশ নিতেন। সময়ের পরিক্রমায় নৌ ভ্রমণে এখন নানা অশ্লীলতা সংযুক্ত হয়েছে। এটি আমাদের সুস্থ বিনোদনের অন্তরায়। এটি অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ততা বলা যায়। এ থেকে আমাদের বের হতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অভিভাবকদের সঙ্গে নদী পথটাকেও প্রশাসনের নজরদারির আওতায় আনতে হবে।