Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

দুর্বৃত্তদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীষ নেতা নিহত, ক্যাম্পজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫৮ AM
আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫৮ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দুর্বৃত্তদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন মুহিবুল্লাহ (৫০) নিহত হয়েছে। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। 

এর আগে উখিয়ার কুতুপালং ১নং ক্যাম্পের ডি-ব্লকে এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। তিন রাউন্ড গুলি বুকে লাগলে মুহিবুল্লাহর মৃত্যু হয়।

নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে তিনি সবসময় বিদেশি বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে আসছিলেন। তার মৃত্যুতে লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

কে এই রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও একই বছর রোহিঙ্গদের বাংলাদেশে আসার দুই বছর পূর্তির মহাসমাবেশ করে আলোচনায় আসেন।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে না যেতে পারার পেছনে বেশ কিছু বিদেশি এনজিও এবং কয়েকজন ব্যক্তির হাত রয়েছে বলে জানা যায়। তাদেরই একজন শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। যিনি সাধারণ মানুষ থেকে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা বনে গেছেন।

জানা গেছে, তিনি ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তখন থেকেই তিনি টেকনাফ এলাকায় অবস্থান করতেন। পরে ১৫ জন নিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামক একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ওই সময় থেকেই বাংলাদেশিসহ বিদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। একাধিকবার সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করেন। 

২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) যুক্ত হওয়ার পর মুহিবুল্লার মূল উত্থান শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচের কদর বেড়ে যায়।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের তথ্য জানার জন্য ইংরেজিতে দক্ষ মুহিবুল্লাহ বিদেশি ও এনজিওগুলোর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে র‌্যাব একবার মুহিবুল্লাহকে আটক করে উখিয়া থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাত করানো হয়েছে।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানেও যোগ দেন মুহিবুল্লাহ। ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করতে সে দেশে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার রোহিঙ্গারা ২০১৯ সালে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতিতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন মুহিবুল্লাহ ও তার সংগঠন। 

জানা যায়, গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ করেই খবর আসে ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসের দিনক্ষণ ঠিক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এ খবর প্রকাশের পরপরই তৎপর হয়ে ওঠে এনজিওগুলো। যোগাযোগ শুরু হয় আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইটসের নেতা মহিবুল্লাহর সঙ্গে। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন হয়ে ওঠেন।

Bootstrap Image Preview