Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ সোমবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

যৌনকর্মে সারারাত সময় না দেয়ায় তরুণীকে হত্যা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৫৪ PM
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৫৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সড়কের ফুটপাথে কার্টন ভর্তি এক নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এবং এমন নির্মম ঘটনা যে ঘটিয়েছে তাকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

খুন হওয়া নারী একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে পরিচিতদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে একান্তে লিপ্ত হতেন। এমন কর্মই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। খুন হন নির্মমভাবে।

এই ঘটনা যে যুবক ঘটিয়েছে তার নাম আব্দুল জব্বার (২৫)। পেশায় গাড়ির গ্যারেজের কর্মী। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করার পরেই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়েছে।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী গার্মেন্টসে চাকরি করলেও তিনি অনিয়মিত যৌনকর্মী। তবে যে কারও সঙ্গে সময় কাটান না তিনি, কেবল পূর্ব পরিচিত হলেই টাকার বিনিময়ে একান্তে লিপ্ত হন। গ্রেপ্তার করা আব্দুল জব্বার তার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে ঘটনার দিন বিকেলে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে। পরে সন্ধ্যায় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে তার ভাড়া বাসায় যায়। এদিকে ওই নারীকে বাসায় আনার পরিকল্পনায় আগেই নিজের স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল আব্দুল জব্বার।

আরও জানান যায়, ওই নারীকে এক হাজার টাকা চুক্তিতে সারারাতের জন্য বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক সন্ধ্যায় বাসায় গিয়েই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় তারা। এক পর্যায়ে ওই নারী চুক্তির টাকা চান এবং তিনি নিজ বাসায় চলে যেতে যান। এদিকে জব্বারে দাবি করেন তার সঙ্গে সারারাত সময় দিতে হবে। সেই চাহিদা অনুযায়ী ওই নারী অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর ওই নারীর মুখ ঝলসে দেওয়া হয়। এর পর তার মরদেহ কার্টনভর্তি করে সড়কের ফুটপাতে ফেলে দেওয়া হয়। গত ০৮ অক্টোবর দিনগত রাতে গা শিউরে উঠার মতো এমন নির্মম ঘটনা ঘটে।

হত্যার পরে ১০ অক্টোবর মরদেহ উদ্ধারের পর তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপরই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেলে ভাটারা থানার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ি এলাকায় নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ঘটনার পর ডিবি পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা শুরু করে। পরবর্তীতে অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপরই গত ১৯ অক্টোবর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার জব্বারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, গত ০৮ অক্টোবর দুপুরে মোবাইলে কথা বলে জব্বারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সে বের হয়। তাকে নিয়ে ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে জব্বার। সন্ধ্যার পরে সে তাকে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। 

পরবর্তীতে ওই নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম শেষ করলে তিনি টাকা দাবি করেন এবং চলে যেতে চান। কিন্তু জব্বার ভিক্টিমকে সারারাতের জন্য রাখতে চায়। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হন ওই নারী। হুমকি দেন তার (জব্বারের) সব কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেবেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে। জব্বারের দাবি, সে নিজের আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে ওই নারীকে (শিপন আক্তার) ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে গলাটিপে হত্যা করে।

ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জব্বার ইয়াবা আসক্ত ছিল। খুনের পর ভিক্টিমের মোবাইল ১ হাজার টাকায় বিক্রি করে সে ৩ পিস ইয়াবা কেনে। এসময় তার বন্ধু হীরাকে বাসায় আনে। তারা দুজন একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করে এবং মরদেহ গুমের পরিকল্পনা করে। এ সময় মরদেহটি প্রথমে একটি কার্টনের মধ্যে রেখে পরবর্তীতে ভাঙারির দোকান থেকে আনা বড় বস্তায় ভরে। পরে রাত তিনটার দিকে জব্বার ও হীরা মরদেহ মাথায় নিয়ে তিনতলা থেকে নামায়। পরবর্তীতে ১০০ টাকায় রিকশাভাড়া করে মরদেহটি রাস্তায় ফেলে দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিতে ওই নারীর চুরি হওয়া মোবাইল, তার ফেলে দেওয়া বোরকা এবং স্যান্ডেলসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল জব্বার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview