বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খোঁজ নিয়ে তার বাবা বলেছেন, “কারাগারে মিন্নি ভালো নেই।”
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর কয়েকদিন আগে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মেয়ের খবর নিয়েছেন বলে শুক্রবার বরগুনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের জানান।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। এই মামলায় জজ আদালতের রায় কার্যকরের ডেথ রেফারেন্স এখন হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক মাস যাবত মিন্নি ঘাড়ে ব্যথা, লো প্রেশার ও দাঁতে ব্যথা নিয়ে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় আছেন কাশিমপুর কারাগারে।
“আমার মেয়ে ঠিকমতো খেতে পারে না; ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তাই খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। কারাগারের পানি পর্যন্ত খেতে পারে না।”
মিন্নির মুক্তির সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন জানিয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, “দীর্ঘদিন কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ মিন্নিকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের ওষুধে মিন্নি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রধান বিচারপতির কাছে উন্নত চিকিৎসার আবেদন করলেও এখনও উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ পাইনি।”
মিন্নিকে এক বছরেরও বেশি সময় দেখতে না পেয়ে তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তার বাবা জানান।
মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি বলেন, “চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দিন পার করছি। করোনার জন্য এক বছরের মধ্যে মিন্নির সাথে দেখাও করতে পারিনি।”
এই বিষয়ে কথা বলতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুনকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
এই কারাগারের সাবেক চিকিৎসক উম্মে সালমা পিয়া বলেন, তার দাঁতের সমস্যা থাকতে পারে। এজন্য তাকে দাঁতের ডাক্তার দেখানো হয়েছে। আর কোনো সমস্যার কথা জানা নেই।
চিকিৎসক উম্মে সালমা পিয়া আগে এই মহিলা কারাগারে থাকলেও এখন অন্য কারাগারে বদলি হয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়। পরে তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মাথায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বরগুনার আদালতে মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দুই খণ্ডে বিভক্ত ওই অভিযোগপত্রের এক অংশে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়। অন্য অংশে রাখা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের নাম।
বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ ২০২০ সালের প্রথম দিন রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ৭৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মিন্নি ছাড়া মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আঁকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)।
পরে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে ওই কারাগারেই রয়েছেন তিনি।
ওই বছরই ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।