কুমিল্লার পূজামণ্ডপে প্রথম প্রতিমা ভাঙচুর করেছিলেন সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সচিব মঈনুদ্দিন আহমেদ বাবু। এমনটাই দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। অন্যদিকে ট্রিপল নাইনে ফোন দেওয়া ইকরামও বিএনপিকর্মী। প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল ও ইকরাম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত ছিল সারাদিনই। এদিকে ঘটনার পর থেকেই খোঁজ নেই মেয়রের পিএস বাবুর।
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ পাওয়া গেছে এমন খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। গণমাধ্যমের কাছে আসা একটি ভিডিওতে প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে দেখা যায় সেখানে। ওই ঘটনা ট্রিপল নাইনে ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে ব্যক্তি সেই ইকরামকেও দেখা যায় সেখানে। দুজনকেই সেখানে দাঁড়িয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
আরেকটি ভিডিওতে ইকরামকে উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে। সেদিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও ছিলেন ঘটনাস্থলে। তার পিএস মঈনুদ্দিন আহমেদ বাবু যার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর তিনিও ছিলেন সেখানে। সহিংসতায় উসকানি দিতে দেখা যায় তাকে। কুমিল্লা শহরের মৌলভীপাড়ায় অভিযুক্ত বাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় গেটে তালা ঝুলছে।
পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন হলেও ১৩ অক্টোবর সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে তৎপর ছিলেন অনেকেই। এলাকাবাসী ও মণ্ডপ সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদের মধ্যে অন্যতম মঈনুদ্দীন আহমেদ বাবু, যিনি সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পিএস হিসেবে পরিচিত। এটি তার বাসভবন। ঘটনার পর থেকেই তার কোনো হদিস নেই।
পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের দাবি সিটি মেয়রের পিএস বাবুই প্রথম প্রতিমা ভাঙচুর করে। ট্রিপল নাইনে ফোন দেওয়া ইকরামও বিএনপির কর্মী বলে দাবি তাদের।
কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, মেয়রের যে পিএস সে প্রথম আমাদের মন্দিরে আঘাত করে। এখন পর্যন্ত কুমিল্লার ঘটনায় দায়ের হওয়া এক ডজন মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিএনপি- জামায়াতের কর্মী। বিএনপি নেতাদের দাবি, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।
কুমিল্লা জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপির কর্মীরা যাতে আন্দোলন করতে না পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা দেওয়া হচ্ছে।
রিমান্ডে উসকানিদাতাদের নাম আসছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান। তিনি বলেন, আমাদের হাতে কিছু কিছু নাম এসেছে; সেগুলো যথার্থ কি-না যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর কীভাবে এটা সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলোও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
তারা হলেন- প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল, নগরী দারোগাবাড়ি মাজারের দুই খাদেম ফয়সাল, হুমায়ুন এবং জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে জানানো ইকরাম।
বুধবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা আদালতে থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক সালাউদ্দিন আল মাহামুদ।
তিনি বলেন, বিকেল ৪টায় কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক চন্দন কান্তি নাথের আদালতে সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। সিআইডি পরে রিমান্ডে নিবে এ কারণে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, সন্ধ্যা ৬টায় ইকবালসহ ৪ জনকে কারাগারে আনা হয়েছে।
সিআইডি কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খান মো. রেজওয়ান বলেন, ইকবালসহ ৪ জনকে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে বিগত দিনের রিমান্ডে আসামিরা যেসব তথ্য দিয়েছে তা যাছাই-বাছাই করতে কিছুদিন লাগবে।
ভিডিও-