ময়মনসিংহের ত্রিশালের বৈলর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল মুনসুর ফকির। পেশায় তিনি একজন ভিক্ষুক। স্ত্রী আর তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে চেয়েছিলেন একটি ঘর। তবে ঘর পাননি তিনি। এ কারণে ক্ষোভে ইউপি নির্বাচনে ওই চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী বনে যান মুনসুর। লড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চশমা প্রতীক নিয়ে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে জয়ী না হলেও পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট। আর এ বিষয়টিকে ভিক্ষুকের নিরব প্রতিবাদ হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী।
রোববার (২৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে ত্রিশাল উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন এ ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে ১০ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মশিউর রহমান শাহান শাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ভিপি সোহেল পেয়েছেন ৫ হাজার ৪১৯ ভোট। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান কবীর পেয়েছেন চার হাজার ১৩৯ ভোট।
নির্বাচনের ব্যাপারে ভিক্ষুক আবুল মুনসুর ফকির বলেন, আমি ভিক্ষুক মানুষ। এ নির্বাচনটা ছিল আমার এক ধরনের প্রতিবাদ। তারপরও ইউনিয়নবাসী আমাকে ভালোবেসে ৩৭৭ ভোট দিয়েছেন। এত ভোট পেয়ে আমি খুব খুশি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে না পারলেও এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময়ই পাশে থাকব।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ত্রিশালের বৈলর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ী গ্রামের আবুল মুনসুর ফকির দীর্ঘ সময় রিকশা চালিয়েছেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। বয়সের ভারে ১৫ বছর আগে রিকশা চালানো ছেড়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে।
সামান্য ভিটেমাটিতে ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন। নিজের জন্য একটি সরকারি ঘরের বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলেন। চেয়ারম্যান তাকে ঘর বরাদ্দ না দেওয়ায় তিনি মঠবাড়ী খালের ওপর একটি টংঘর তুলে একা থাকা শুরু করেন। সেইসঙ্গে মনের ভেতর পুষে রাখেন ক্ষোভ। এরপরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে।