Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ রবিবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

এলাকায় কোনো গৃহহীন আছে কি না খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০২২, ০১:৪৪ PM
আপডেট: ১৬ জানুয়ারী ২০২২, ০১:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


এলাকায় কোনো গৃহহীন মানুষ আছে কি না তা খুঁজে বের করতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। বিশেষ করে রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি ভূমিহীন ও দারিদ্র্যপীড়িত লোক ছিল। ইতোমধ্যে আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর করে দিয়েছি, জাতির পিতা যেটা শুরু করেছিলেন গুচ্ছগ্রাম-আদর্শ গ্রাম, সেই সঙ্গে আমাদের আশ্রয়ন প্রকল্প। এখন আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে, আমরা উন্নত মানের ঘর দিচ্ছি।’

গৃহহীনদের খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি চাই এখানে আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন, বিভাগীয় কর্মকর্তারা আছেন। আমার কথাটা হচ্ছে, আপনাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, দলের লোক যারা আছেন সবাইকে বলব, আপনারাও খুঁজে বের করেন কোনো ভূমিহীন মানুষ আছে কি না।

‘কারণ, আমার লক্ষ্য হচ্ছে এ দেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। দরকার হলে জমি কিনে তাদের আমরা ঘর করে দেব, এ জন্য আমরা ফান্ডও করেছি। সেটা আমাদের একেকটা মানুষের জীবনকে পাল্টে দেবে। পাশাপাশি আমাদের দেশেও দারিদ্র্য বিমোচন হবে।’

এ সময় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লক্ষ্য। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যেমন গড়ে তুলেছিলেন, সেই সঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন একদম গ্রামের তৃণমুল মানুষকে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে।

‘প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তৃণমুল মানুষের ভাগ্য যাতে দ্রুত পরিবর্তন হয়। খাদ্য নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয়, মানুষে মৌলিক চাহিদাগুলো যেন পূরণ হয় সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন মাত্র ১৯টা জেলা ছিল। জেলার যে মহকুমা ছিল, প্রায় ৬০টি মহকুমাকে তিনি সে সময় জেলায় রূপান্তর করেন। ৬০ জন গভর্নর নিযুক্ত করেন। তাদের হাতেই সব ক্ষমতা এবং তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। জনগণ যেন তার সেবাটা পায় সেটি তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

‘যদি তিনি এগুলো করে যেতে পারতেন, তাহলে জনগণ যেমন তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি যেমন নির্বাচিত করতে পারতো, তেমনি এ দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি দ্রুত হতো। দেশে কোনো মঙ্গা থাকতো না, দুর্বিক্ষ থাকতো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর আমি দেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। তখন আমি দেশে ফিরে এসে সমগ্র বাংলাদেশ সফর করেছি। এই রংপুরের সব জেলায় ইউনিয়ন পর্যন্ত আমি গিয়েছি। তাদের দারিদ্র, জীবনযাত্রা সব কিছু আমি নিজে অবলোকন করেছি।

‘আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে কেবল হত্যা করা হয়নি, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়েই খেলা শুরু হয়। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে যতটা সচেষ্ট, জনগণের কথা ততটা ভাবেনি। ভাবাটা স্বাভাবিকও না।’

অনুষ্ঠানে রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ২১ বছর পর সরকারে আসি। এই রংপুরের বিভিন্ন এলাকা রংপুর থেকে শুরু করে কুড়িগ্রাম-নীলফামারি সব এলাকায় একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্বিক্ষের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যাই। সেখানে আমরা লোঙ্গনখানা খুলি, আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য করেছি।

‘যত বার বন্যা হয়েছে, যত বার দুর্বিক্ষ হয়েছে আমরা কিন্তু সেখানে গিয়েছি। তখন এমন একটা অবস্থা ছিল যে, যাতায়াত বলতে কিছু ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল না, নদীর পার দিয়ে কাদামাটি দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা চলে গিয়েছি। কোনো জায়গা বাদ দেইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ অঞ্চলে প্রতি বছর মঙ্গা হতো বিশেষ করে চৈত্র মাসে আর কার্তিক মাসে। আমরা এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মানুষের কাজ থাকতো না, উৎপাদন থাকতো না। তখন থেকেই আমরা পরিকল্পনা নিই কীভাবে এ অঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করব।

‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে কিন্তু মঙ্গা ছিল না। আমরা কিন্তু ৯৮ সাল থেকেই মঙ্গা দূর করে দিয়েছিলাম। ২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আবার মঙ্গা শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর অন্তর্গত ছিল রংপুর, ১৬টা জেলা। ২০১০ সালে আমরা রংপুর বিভাগ করে দিই। এই বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা সরকারে আসার পর এই অঞ্চলে আর মঙ্গা দেখা দেয়নি। মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল হয়ে গেছে রংপুর, অথচ এক সময় খাবারের অভাবে মানুষ ধুকে ধুকে মারা যেত।

‘আমার এখনও সেই চিত্র মনে পড়ে, যখন মানুষগুলোকে দেখেছি। তারা যখন দাঁড়াতো, মনে হতো শুধু হাড় আর চামড়া ছাড়া শরীরে কিছু নেই। জীবন্ত কঙ্কাল যেন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এটা আমার নিজের চোখে দেখা। এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করে দিয়েছি। প্রত্যেক অঞ্চলে আমরা কাজ করেছি এতে দুর্বিক্ষতো দূরই হয়েছে, এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে সব উন্নয়ন কিন্তু নির্ভর করে একেকটা সরকারের চিন্তার ওপর। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন সব সময় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই চিন্তা করেছে। আমরা সেই পথ অনুসরণ করেছি, এর ফলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন হচ্ছে।’

Bootstrap Image Preview