ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচী আসছে। দেশের নয়টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এই কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী ২৮ মার্চ সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেড়েছে গ্যাস-পানি ও বিদ্যুতের মূল্য। এরপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বহুল ব্যবহৃত ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যবসায়িদের চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছে না খুচরা ব্যবসায়িরা। প্রশাসন অভিযান চালিয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর পিছনে সরকার ও ব্যবসায়ি সিণ্ডিকেট কাজ করছে বলে মনে করেন বামপন্থি দলগুলোর নেতারা।
দেশের অন্যতম বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সদ্য সমাপ্ত কংগ্রেসে (কেন্দ্রীয় সম্মেলন) মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হরতাল কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে ও বুধবার বাসদ কার্যালয়ে জোটের বৈঠকে হরতাল ছাড়াও লাগাতর বিক্ষোভ কর্মসূচী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
হরতাল কর্মসূচীর সঙ্গে জোটভুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি জোটের বাইরে থাকা বামদল ও প্রগতিশীল শক্তিকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটের শীর্ষ নেতারা বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছেন।
বাম গণাতন্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতাল কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হলেও তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে একাধিক প্রস্তাব রয়েছে। তবে শেষ সপ্তাহে হচ্ছে এটুকু বলা যায়। এ নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা চলছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা হবে। বাম প্রগতিশীল সকল শক্তিকে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
কর্মসূচী সফল করতে জোটগত ভাবে আন্দোলনের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দল আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করেছে। সিপিবি আগামী ১০ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সপ্তাহ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ দিনের কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি সভায় এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ উপলক্ষে আগামী ১৩ থেকে ২৭ মার্চ সারা দেশে হাটসভা, পথসভা, পদযাত্রা, মানববন্ধন, জনসংযোগসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একই দাবিতে আগামী ১০ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের কর্মসূচী দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধসহ ১২ দফা দাবিতে পার্টির পক্ষ থেকে ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টানা ১৫ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হবে।
এছাড়া বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং বাম ঐক্য জোট ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।