মাহমুদ হোসাইন একজন সংবাদকর্মী। গত মঙ্গলবার রাতে ব্যক্তিগত কাজ শেষে সেগুনবাগিচা যাওয়ার পথে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। শাহবাগ থেকে রিকশাযোগে রমনা পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তার কাছে থাকা মূল্যবান সবকিছু নিয়ে যায়।
মাহমুদ হোসাইন বলেন, কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে কী হলো আমি টেরই পেলাম না। চলন্ত রিকশা থামিয়ে নিমিষেই আমার সবকিছু নিয়ে গেল। একটু জোর করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারা এমনভাবে ভয় দেখাচ্ছিল আমার কিছুই করার ছিল না। তখন রাত প্রায় ১০টা বাজে।ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। কেউ বুঝতেই পারেনি আমার সঙ্গে কী হয়ে গেছে। কারও সাহায্য নেবো এমন অবস্থাও ছিল না।
মাহমুদ হোসাইনের ঘটনার একদিন পর ঢাকার আরেক সংবাদকর্মী গুলিস্তানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মারত্মকভাবে আহত হন। তার নাম কামাল হোসেন তালুকদার। বৃহস্পতিবার কামাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পিকনিক থেকে ফিরছিলেন। পিকনিকের বাস থেকে নামার পর রিকশা নিয়ে আজিমপুরের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রিকশায় ওঠার সময় পেছন থেকে এক ছিনতাইকারী দৌড়ে এসে তাকে ধাক্কা দেয়। নিজেকে সামলাতে না পেরে তিনি কয়েক পাক ঘুরে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে তার ঠোঁটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তার ঠোঁটে ৭টা সেলাই দেন।
কামাল বলেন, আমার হাতে তখন একটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিল। ছিনতাইকারী সেগুলো নেয়ার জন্য আমাকে ধাক্কা মেরেছিল। শুধু মাহমুদ হোসাইন ও কামাল হোসেন তালুকদার নন সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রায়ই নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান অনেক কিছু হারাতে হচ্ছে অনেককে।
সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীর দখলে চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। রাত গভীর হলে যানবাহন ও মানুষের সমাগম কমে গেলে ছিনতাইকারীরা বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তখন ঢাকার বেশকিছু এলাকায় রিকশা ও পায়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশীয় অস্ত্রধারী ও দলবদ্ধ এসব ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করাও কঠিন। একটু বল প্রয়োগ করতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় থাকে। ছিনতাইকারীরর ছুরিকাঘাতে প্রায়ই মারাত্মকভাবে আহত ও হতাহতের মতো ঘটনা ঘটছে। সবমিলিয়ে রাতে চলাচলের জন্য ঢাকা আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তুলনামূলক কম টহল টিম, ভুক্তভোগীদের মামলা না করা, জামিনে মুক্ত হওয়া ছিনতাইকারীদের নজরদারিতে না রাখার কারণে ঢাকায় ছিনতাই কমছে না। কারণ ঢাকার আয়তনের তুলনায় টহল ব্যবস্থা ও চেকপোস্ট ততটা জোরদার নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা মামলা না করে ঝক্কিঝামেলা এড়াতে শুধু জিনিসপত্র হারানোর জিডি করেন। মামলা না হওয়ার কারণে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা আসামি গ্রেপ্তার করেন না।
রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ফেব্রুয়ারি মাসের ক্রাইম সভায় ছিনতাই নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। ঢাকায় চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তালিকা ধরে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ডিএমপি আশঙ্কা করছে, ঈদকে সামনে রেখে এসব অপরাধ আরও বেড়ে যেতে পারে। কমিশনার বলেছেন, শুধু পাহারা দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না। অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে অপরাধ প্রতিরোধ করতে হবে। ঈদকে ঘিরে বিপণিবিতানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ইতিমধ্যে ডিএমপি’র সবক’টি ক্রাইম ডিভিশনের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আলোচিত ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর মামলায় আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতের বেলা টহল ও চেকপোষ্ট জোরদার করা হয়েছে। এদিকে অজ্ঞানপার্টি চক্রের সদস্যদের উৎপাতে অতিষ্ঠ যাত্রীরা। যাত্রীবেশে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গণপরিবহনে অবস্থান নেয়। পরে সুযোগ বুঝে টার্গেটকৃত যাত্রীকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায় টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সবকিছু।
অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা যাত্রীদের অজ্ঞান করতে গিয়ে মারাত্মক কেমিক্যাল প্রয়োগ করে। এসব কেমিক্যালে অনেক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দীর্ঘ চিকিৎসা নিয়েও অনেকে সুস্থ হতে পারেন না। গত কয়েক মাস ধরে অজ্ঞানপার্টির কবলে পড়েছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সংবাদকর্মী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তরল খাবারের সঙ্গে চেতনানাশকদ্রব্য ও অজ্ঞান করার মলম ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা মানুষকে অজ্ঞান করে। পুলিশ বলছে, অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি যারা বাহিরে চলাফেরা করেন তাদের সচেতনতা।