রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ছাড়াও ঘটনাস্থলে মারা গেছেন বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি।
ঘটনার সময় টিপুর গাড়ির পাশেই ছিল প্রীতির রিকশা। সঙ্গে ছিলেন তার বান্ধবী সুমাইয়া। নির্মম এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রীতির বাসা মালিবাগে। তার বাসায় গেস্ট থাকায় সে আমার তিলপাপাড়ার বাসায় থাকবে বলেছিল। আমি তাকে বাসায় আনতে গিয়েছিলাম। আমাদের বহনকারী রিকশাটি সিগন্যালে থামতেই বিকট শব্দ শুনতে পাই। ভেবেছিলাম গাড়ির টায়ার ব্লাস্ট হয়েছে কি না। শব্দ শুনে একপর্যায়ে আমরা দুইজন রিকশার দুই দিক থেকে লাফ দিই।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর আমি দেখি প্রীতি মাটিতে শুয়ে আছে। সে উঠছে না। পাশের একজন বলল প্রীতি হয়ত সেন্সলেস হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি মনে করেছিলাম সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে জাহিদুল মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থী প্রীতিও। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে তিনিও বিদ্ধ হন। পরে তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত প্রীতি বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক মুন্না বর্তমানে ঢামেকে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল থানা শ্রমিক লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমাদের গ্রুপের নেতা ছিলেন টিপু ভাই। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে টিপু ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
কারা হত্যা করেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের নাম আমি বলতে পারব না। টিপু ভাইকে মেরে ফেলার পর আমরা এলাকায় যেতে পারব কি না সেটা নিয়েই ভয়ে আছি। আর এখন যদি কারো নাম বলি তাহলে জানে মেরে ফেলবে আমাকে। তবে এলাকায় যেকেউ গেলেই বুঝতে পারবে কারা টিপু ভাইকে হত্যা করেছে।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মর্গে সকাল থেকেই টিপুপন্থী নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। সবার মুখেই আতঙ্কের ছাপ।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, টিপুর মরদেহ বেলা ১১টার দিকে মর্গে আনা হলেও ময়নাতদন্ত শুরু হয়নি। এছাড়া এ ঘটনায় নিহত প্রীতির মরদেহ এখনো মর্গে আনা হয়নি।