নিত্যপণ্যের দামের টানা ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। চাল, ডাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজ ও তেলসহ প্রায় সব পণ্যেরই দাম যেন আকাশছোঁয়া। তাই কম দামে পণ্য কিনতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেলের লাইনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এসব নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সঙ্গে একই লাইনে শামিল হচ্ছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানীতে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই পর্যাপ্ত আবাসনব্যবস্থা। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে মেস অথবা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কেউ কেউ দুই-একটা টিউশনিও করেন। কেউবা আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের খরচ চালান। এরই মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার কলতাবাজার ও বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টিসিবির ট্রাকের পেছনে প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কয়েকশ নারী-পুরুষকে। কেউ মাথা নিচু করে, কেউ বসে, আবার কেউ ছিলেন দাঁড়িয়ে। কম টাকায় টিসিবির পণ্য কিনতে সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া। তিনি দেশ বলেন, ‘কয়েকটা টিউশনি করি। পরিবারের আয় কম। তাই নিজের খরচ নিজেকেই জোগাড় করতে হয়। কয়েকজন মিলে মেস ভাড়া করে থাকতে হয়। মেসে একেক দিন একেকজনের বাজার। আজ আমার বাজার। অনেকক্ষণ হলো লাইনে দাঁড়িয়েছি। একটু কষ্ট হলেও এখান থেকে একটু কম দামে কিনলে আমার কিছু টাকা কম খরচ হবে।’
একই লাইনে দাঁড়ানো সরকারি কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব বলেন, ‘বাংলাবাজার একটা লাইব্রেরিতে কাজ করি। বাবা নেই। বাড়িতে মা অসুস্থ। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। এছাড়া রয়েছে ঢাকায় নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ। কিছুটা সাশ্রয় করতেই টিসিবির এই লাইনে দাঁড়িয়েছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর মহিলা কলেজের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন একসঙ্গে একটি বাসা ভাড়া করে থাকি। দুয়েকজন ছাড়া সবাই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। সবার পরিবারের অবস্থা তো সমান না।
টিসিবির ট্রাকে একটু কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। প্রচণ্ড রোদে লাইনে দাঁড়িয়েও তেল, ডাল ও পেঁয়াজ নিয়েছি। বাজার থেকে কিনলে এগুলো আরও বেশি দামে কিনতে হতো।’
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, কলতাবাজার ও কবি নজরুল কলেজের পাশে প্রতিদিনই টিসিবি কম দামে পণ্য বিক্রি করে থাকে। সেখানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজন এখন টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সাধারণ ক্রেতাদের রয়েছে নানা অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে লাইনে দাঁড়িয়ে কাক্সিক্ষত পণ্য না পাওয়া, একটি পণ্য নিলে সঙ্গে আরেকটি পণ্য নিতে বাধ্য করার এবং খুচরো টাকা না দিলে পণ্য না দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহাদুর শাহ পার্কে টিসিবির এক পণ্য বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ট্রাক দাঁড় করানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দৌড়ে আসে। সময় বাড়তে বাড়তে লাইন আরও বড় হতে থাকে। আমরা পণ্য দিয়ে সেরে উঠতে পারি না। পণ্য শেষ হয়ে যায়, কিন্তু লাইন শেষ হয় না। রাত ৭-৮টা পর্যন্তও পণ্য দেওয়া হয়।
কোনোরকম বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় এজন্য আমাদের একজন লাইন ঠিক রাখে। যাতে একজনের সামনে আরেকজন না আসে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করি।’