ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আলোচিত দুই শিশু হত্যার ঘটনায় মা রিমা বেগমের পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল্লাহপুরের একটি বাস কাউন্টারের সামনে থেকে সফিউল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রংপুর যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কেটেছিলেন। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানে আনার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর সংবাদ মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত ১৩ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার ঘটনায় সারা দেশ থেকে নির্ধারিত ব্যাচের (ব্যাচ নং-৩২১১৩১২১) নাপা সিরাপের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কারো কাছে এ ওষুধ থাকলে দ্রুত নিকটস্থ কেমিস্ট অফিসকে অবহিত করতে এবং তা বিক্রি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বলা যায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়, দেশব্যাপী চলতে থাকে হৈচৈ। কিন্তু নাপা সিরাপের বিষক্রিয়া নয়, এর পেছনে জড়িত ছিল পরকীয়া। দুই শিশুকে তাদের মা মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন। পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজশে ঘটান এ হত্যাকাণ্ড। এরপর নাপা সিরাপের বিরুদ্ধে বিষক্রিয়ার অপপ্রচার চালান।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মা লিমা বেগমকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তাকে আদালতে নেওয়া হচ্ছিল। আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান জানান, নিহত দুই শিশুর বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে লিমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, লিমা আশুগঞ্জের একটি চালকলে কাজ করেন। তার স্বামী কাজ করেন ইটভাটায়। চালকলে কাজ করার সুবাদে আরেক শ্রমিক সফিউল্লার সঙ্গে লিমার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রটি জানায়, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাইয়ে হত্যা করেন মা লিমা বেগম। মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নাপা সিরাপের রি-অ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করেন।
গত ১০ মার্চ আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিন নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যায় বলে অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। এ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।
এর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সব বিভাগীয় এবং জেলা কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'গত ১১ মার্চ দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, মেসার্স বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃক উৎপাদিত নাপা সিরাপ (প্যারাসিটামল ১২০ মিগ্রা./৫ মি.লি. ব্যাচ নং- ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ : ১২/২০২১, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ : ১১/২০২৩) নামীয় ওষুধটি সেবন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একই পরিবারের ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। '
কিন্তু ঐ দুই শিশুর মাকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেল ঘটনা অন্য।