শিশু আরাফাত (৯) হত্যার প্রতিশোধ নিতে ঘাতক ইমরানের সঙ্গে মেয়ে সেজে মুঠোফোনে প্রেমের অভিনয় করেন ভাই আজাদুর রহমান ওরফে নবীন (২৫)। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ রাতে ইমরানকে বাড়িতে ডেকে আনেন আজাদুর। এরপর বন্ধু আলাউদ্দিনের (২১) সহযোগিতায় ইমরানকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।
ইমরানকে হত্যা করার চারদিনের মাথায় আজাদুর ও আলাউদ্দিনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এমনকি এ ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আজাদুর ও আলাউদ্দিন।
পাবনার বেড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, ২৬ মার্চ সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ইমরান হোসেন খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। ২৭ মার্চ বেড়া উপজেলার আল হেরানগরের আব্দুর রহমানের জমিতে ইমরানের লাশ পাওয়া যায়।
নিহত ইমরান ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া মহল্লার আরাফাত নামের এক শিশু অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশোর অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর যশোর কিশোর সংশোধনাগারে কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে মুক্তি পান তিনি।
এদিকে ইমরান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় অভিযান চালিয়ে আরাফাতের ভাই আজাদুর এবং তার বন্ধু আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শিশু আরাফাত হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইমরানকে খুন করা হয়েছে বলে দুই আসামি স্বীকার করেছেন।
আদালতে দেওয়া আজাদুর ও আলাউদ্দিনের জবানবন্দির বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৫ সালের আগস্টে ইমরানসহ তিনজন মিলে শিশু আরাফাতকে অপহরণের পর হত্যা করেন। এ ঘটনায় ইমরান সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে বের হন। বের হওয়ার পর তিনি আরাফাতের ভাই আজাদুরকে ‘কী করতে পারলি’ বলে নানা ধরণের তীর্যক মন্তব্য করেন। এতে আজাদুরের মধ্যে ভাই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার নেওয়ার ইচ্ছা জাগে। তিনি ইমরানের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মেয়ে সেজে তিন মাস প্রেমের অভিনয় করেন। পরে বন্ধু আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ইমরানকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য দুজনে দুটি ছুরিও কেনেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেয়ে কণ্ঠে ইমরানকে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলেন আজাদুর। সেখানে পৌঁছানোর পর আজাদুর ও আলাউদ্দিন এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ইমরানকে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, ইমরান হত্যা মামলায় আসামি আজাদুর ও আলাউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভাই হত্যার বদলা নিতে গিয়ে আরেকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।