Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

তৃণমূলের গোপন ব্যালটে বিএনপির একনায়কতন্ত্রের অবসান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২২, ০৮:১৫ AM
আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২, ০৮:১৫ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বিএনপির কাউন্সিলের পর এক বলয়ে হতাশা, আরেক বলয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস। কেউ বলছেন এটা গণতন্ত্রের সুফল আবার কেউ বলছেন অবাধ গণতন্ত্রের কুফল। এভাবেই কাউন্সিলকে মূল্যায়ন করছেন বিএনপির দুই বলয়ের নেতারা। তবে তৃণমূলের এক সুর-গোপন ব্যালটে একনায়কতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারের পতন হয়েছে।

তাদের দাবি, রহস্যজনকভাবে হঠাৎ বিএনপি পরিবারে বিরাট আধিপত্যের অধিকারী হয়ে ওঠা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে। আব্দুল মুক্তাদির বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাউন্সিলের বিজয়ী-বিজিত সবাই আমার নিকটজন। আমরা একই দলের। একসঙ্গে রাজনীতি করি। তবে গোপন ব্যালটে পরাজিত খন্দকার মুক্তাদিরের পছন্দের প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন, কাউন্সিলে যে ফল দেখেছেন তা অবাধ গণতন্ত্রের কুফল। প্রতি ইউনিটে আমরা ৫ জন করে কাউন্সিলর ঠিক করেছিলাম। পরে ১০১ জন করায় এই বিপর্যয় ঘটেছে। তবে এই কমিটি বেশিদিন টিকবে না। তারা রাজপথের আন্দোলনেও ব্যর্থ হবে। ঢাকার বাসিন্দা সিলেটের রাজপথের আন্দোলন করবে কীভাবে? রাজনীতি এত সহজ বিষয় না।

কাউন্সিলে ক্ষমতার হাতবদল ও ফল বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোচনা-সমালোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে বেশ কয়েকটি বিষয়। বলা হচ্ছে-এই ফলাফল তৃণমূলের বঞ্চিত, নিপীড়িতদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এতে মুক্তাদির বলয়ের শামীম ও আলী বলির পাঁঠা হয়েছেন। গণতান্ত্রিক দল বিএনপিতে সিলেটে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে এটা তৃণমূলের বড় একটা বিপ্লব। কেন্দ্রের নতুন নির্দেশনা মাঠে বুমেরাং হয়েছে!

জানা যায়, সিলেটের জেলা, পৌরসভা, উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন বিএনপির মুক্তাদির বলয়ের নেতারা। এমনকি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির গঠনেও সক্রিয় ছিলেন এই বলয়ের নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, জেলা বিএনপিতে থাকা ওই এলাকার নেতাদের এলাকায় কমিটি গঠনের সময় ওই এলাকার নেতাদের পাত্তাই দেওয়া হয়নি।

এই ইস্যুতে সিলেট বিএনপির সাইফুর-ইলিয়াস বলয় একাত্মা হয়। মুক্তাদির বলয় অনুসারী জেলা আহ্বায়ক কমিটি বিএনপির প্রতিটি ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ ৫ পদেই মুক্তাদির অনুসারীদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল প্রতি ইউনিটের ভোটারই তাদের। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদ-পদবিও পান তার অনুসারীরাই। ফলে অন্য বলয়গুলোর ত্যাগী, পরীক্ষিতরা বাদ পড়েন।

কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে গিয়ে ১০১ সদস্যের ইউনিট কমিটির বাকি ৯৬ জনও ভোটার হন জেলার কাউন্সিলে। ফলে যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ্য পদ না পাওয়া দলের ত্যাগী, বঞ্চিত, পরীক্ষিতরা চরম খ্যাপে যান মুক্তাদির বলয়ের ওপর। প্রতিটি ইউনিটের বিগড়ে যাওয়া এসব ভোটার মুক্তাদির বলয় হটাতে একজোট হয়। কাউন্সিলের গোপন ব্যালটে ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে এর প্রতিফলন ঘটান তারা।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মুক্তাদিরের সঙ্গে বনাবনি নেই সিলেটের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফের। এবারের কাউন্সিলে জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার আশা নিয়ে সভাপতি প্রার্থী হন আরিফ। এরপর প্রতিটি ইউনিটের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের পাশে ভেড়ান। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছাড়াও জেলার বঞ্চিত নেতারা আরিফকে সমর্থন দেন।

কিন্তু প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় নাটকীয়তা। স্থগিত করা হয় নির্বাচন। নির্বাচন থেকে সরতে বাধ্য করা হয় আরিফকে। জেলার নেতাদের অনিয়ম তদন্তের জন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জুনিয়র নেতাদের দিয়ে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এসব বিষয় একের পর এক বিষিয়ে তোলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। সবকিছুর দায় পড়ে মুক্তাদির বলয়ের ওপর। সর্বশেষ এর বলি হোন সভাপতি প্রার্থী আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলী আহমদ।

এদিকে মুক্তাদির বলয় প্রতিটি ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদের ৫ সদস্য পেলেও সংখ্যার আধিক্য বিরোধীদের। ফলে প্রায় প্রতিটি ইউনিটেই ৫ জনের বিপরীতে ৯৬ জন এবং সেই সংখ্যাধিক্যের ভোটে জেলার নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ায় মুক্তাদির বলয় জেলায় এখন অনেকটা কর্তৃত্বশূন্য। কাউন্সিলের আগেই জোর করে নির্বাচন থেকে সরানো হলেও এই হিসাব কষে ফুরফুরে মেজাজে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ৮৬৮ ভোট পেয়ে সভাপতি নিবাচিত হন আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল কাহের শামীমের প্রাপ্ত ভোট ৬৭৫। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী এমরান আহমদ চৌধুরী পেয়েছেন ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলী আহমদ পেয়েছেন ৫৭৪ ভোট। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থী আব্দুল মান্নান ৮১ এবং আ ফ ম কামাল পান ৭২ ভোট।

Bootstrap Image Preview