চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রেহায়চরে নির্মিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতু। সেতুটির ধারণক্ষমতা ৩০ টন। কিন্তু সেতুটি দিয়ে পার হচ্ছে ৭০-৮০ টনের ভারী ট্রাক। ফলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। সেতুটির উপর দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবাহী ট্রাক পার হওয়ায় সেতুটি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বীকার করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগও। তবে বিকল্প সেতু নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও, অধরাই থেকে গেছে প্রকল্পটি।
জেলা সড়ক ও জনপথের (সওজ) তথ্য মতে, ১৯৯৩ সালে চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মহানন্দা নদীর উপর নির্মাণ করে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতু। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ সড়কের এ সেতুর ধারণক্ষমতা ৩০ টন নির্ধারণ করেছে সড়ক বিভাগ।
বারোঘরিয়া চত্বরের দোকানি মানিক চন্দ্র দাস। তিনি এক দশক ধরে সেতুটির পাশে দোকানদারি করছেন। তিনি জানালেন, সেতুটি দিয়ে ১২ চাকা, ১৮ চাকার পাথরবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। এমনকি মাঝে মধ্যে পাথর ভর্তি ২২ চাকার ভারি ট্রাকও যায়। সেতুটি নির্মাণের পর সোনামসজিদ পোর্ট চালু হয়। এরপর থেকেই এ সেতুটি দিয়ে ভারি ট্রাক যাতায়াত করছে। ফলে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হুমকিতে আছে। এমন করে চলতে থাকলে আগামিতে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে সেতুটি।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে একটি পাথরবাহী ট্রাক। ট্রাকটি এসে সেতুর টোল দেয়ার জন্য দাঁড়ালে কতো টন পাথর আছে— এমন প্রশ্নে অবাক হন চালক। ইনিয়ে-বিনিয়ে ট্রাকচালক জানান, ট্রাকটিতে ৩০-৩৫ টন পাথর আছে। এ সময় ওই ট্রাকচালকের কাছের পাথর বোঝাইয়ের রশিদ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। রশিদ না দেখাতে পেরে ট্রাকচালকটি বলেন, ‘সরকার তো আমাদের তেমন কিছুই বলেনি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। এ সেতু দিয়ে তো আরও অনেক ভারী ভারী ট্রাক যাতায়াত করে, তাদের গিয়ে প্রশ্ন করেন। এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।’
সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি পরিবহনের চাপ বাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গার যাদুপুর থেকে নয়াগলার খেয়াঘাট পর্যন্ত বিকল্প সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু আশ্বাসটি অধরাই থেকে গেছে। কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় সড়ক বিভাগের লোকজন মাপজোখ করে নিয়ে গেলেও ব্রিজটি নির্মাণের কোন খবর নেই। ফলে ওইসব এলাকার মানুষরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা অজিত কুমার জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি করা পরিবহন বেড়ে যাওয়ায় বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতুটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ ব্রিজের বিকল্প যাদুপুর-নয়াগলা ঘাটে ব্রিজটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর জন্য উপকার হবে।
তিনি আরও জানান, বিকল্প সেতুটি নির্মিত হলে একদিকে যেমন শহরকে বাইপাস করে পণ্যবাহী ট্রাক দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, অন্যদিকে ঝুঁকি এড়ানো যাবে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতুর।
নয়াগোলা মোড়ের একটা চায়ের দোকানে কয়েকজন মিলে আলাপ করছিলেন সড়ক বিভাগের আশ্বাস দেয়া যাদুপুর-নয়াগলা সেতুটি নিয়ে। সংবাদিক পরিচয় পেয়ে কামরুল হুদা জানালেন, যদি যাদুপুর থেকে নয়াগলা ঘাটে সেতু নির্মাণ হয়, তাহলে নদীর ওপারের বাসিন্দারের যোগাযোগ মাধ্যম বাড়বে। রাতে প্রায় অনেক সময় ঘাটে নৌকা পাওয়া যায় না, ব্রিজ নির্মাণ হলে আর এরকম ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
নয়াগলার রাকিবুল নামের এক ছাত্র জানালেন, এখানে সেতু নির্মাণ হলে যাদুপুর আর নয়াগলা এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে বিদ্যালয় অথবা কলেজে যেতে পারবে। কৃষকরা খুব সহজে তাদের উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়া করতে পারবে। সব মিলিয়ে সেতুটি নির্মাণ হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সবখাতে উন্নয়ন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক জানান, মহানন্দা সেতু দিয়ে ওভারলোড পাস হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে খুব শিগগির শিবগঞ্জের কয়লাবাড়ি এলাকায় ওজন পরিমাপক নির্মাণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ করাও হয়ে গেছে। যদি আমাদের উদ্যেগটি সফল হয়, তবে আশা করি এ সেতু দিয়ে আর ওভার লোড হবে না।
পাশাপাশি বিকল্প সেতু নির্মাণের প্রকল্পও আলোর মুখ দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই কর্মকর্তা।